দুই বছর আগেও যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন শেহবাজ শরীফ, দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্ত থেকে দেশকে বাঁচাতে জনগণের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিলো তাকে। ভঙ্গুর জোট সরকারও খুব একটা সমর্থনে ছিল না তার। এবারের পরিস্থিতি আরও ভিন্ন।
রোববার আবারও বিশ্বের পঞ্চম ঘনবসতিপূর্ণ দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেহবাজ। এবারও নড়বড়ে তার অবস্থান। কারাগারে থাকা ইমরান খানের সমর্থকরাই ফেব্রুয়ারির ভোটে বেশিরভাগ আসন দখল করেছে। ক্ষমতায় শেহবাজ ফিরেছেন নড়বড়ে জোট সরকার নিয়ে।
এর মধ্যে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ সহায়তা এপ্রিলের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দেশের জনগণ আর সেনাবাহিনীকেও শান্ত রাখতে হবে শেহবাজের।
সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান চেয়েছিলেন মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত দেশের সাধারণ মানুষকে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিতে। কিন্তু এ কারণে সরকারের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সেসময় হাতছাড়া হয়ে যায় আইএমএফের ঋণ।
একই সময় শেহবাজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিন আগেই জানতে পারেন, ঋণ সহায়তা পেতে জ্বালানির দর বাড়াতে হবে। ছয় সপ্তাহ সময় লেগেছিল জোট সরকারকে রাজি করাতে, কিন্তু ততোদিনে পাকিস্তানের লাখ লাখ ডলার ক্ষতি হয়ে যায়। সেসময় অপ্রিয় সেই ৩শ' কোটি ডলারের ঋণ ছাড় পায় পাকিস্তান জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কমিয়ে আর দাম বাড়িয়ে। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আবারও তার ফিরে আসা নিয়ে তাই হতাশা দেশটির সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা।
পাকিস্তানের একজন নাগরিক বলেন, ‘শেহবাজ শরীফ আগেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমি শুধু বলব, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনুন। এখনই শুনছি জ্বালানির দাম বাড়বে।'
আরেকজন বলেন, 'জাল ভোটে তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। পাকিস্তানের উন্নতি হবে না। আরও অবনতি হবে, কারণ মূল্যস্ফীতি। সবকিছুর দাম বাড়ছে।'
নওয়াজ শরীফের পরিবর্তে শেহবাজ শরীফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টা অনাকাঙ্ক্ষিত হিসেবেই দেখছে এনডিটিভি। এদিকে, করাচি আর লাহোরের রাস্তায় রাস্তায় সাধারণ মানুষের শঙ্কা। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি যেভাবে জীবনমান কমছে, তাতে বেশিরভাগ পাকিস্তানির শঙ্কা, নতুন সরকার কোন পরিবর্তন আনতে পারবে না।
নতুন সরকারের জন্য এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ, দেশের মানুষের আস্থা ফেরানো। পাকিস্তানের ঋণ পরিশোধের অবস্থা এখন স্থিতিশীল না। রেকর্ড সুদের হার আর দুর্বল জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির বড় বাঁধা। মূল্যস্ফীতি কমলেও এখনও ২০ শতাংশের ওপরে। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বিশ্লেষকরা বলছেন, শেহবাজ শরীফ যদি এখন জনগণের করের বোঝা না বাড়িয়ে ৬শ' কোটি ডলারের ঋণ নিশ্চিত করতে পারে, তবেই স্বস্তি ফিরতে পারে সাধারণ মানুষের মাঝে।