যুদ্ধ ও নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বৈশ্বিক অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতার পেছনে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে চাহিদা ও যোগানের সামঞ্জস্য। আর্থিক খাতে নানা কঠোরতার মধ্যেও অর্থনীতির গতি চলমান ছিল। ভূরাজনৈতিক নানা অনিশ্চয়তার পরও শ্রমশক্তি বেড়েছে, জ্বালানি ও পণ্যের দাম অর্থনীতির জন্য অনুকূল হয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমএফ।
সংস্থাটির তথ্য মতে, চলতি বছরে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে হবে ৩.১ শতাংশ। যা ২০২৫ সালে দাঁড়াবে ৩ দশমিক ২ শতাংশে। যদিও গত অক্টোবরে ২ দশমিক ৯ শতাংশে নামার পূর্ভাবাস দিয়েছিল আইএমএফ। এবারের হালনাগাদে বাংলাদেশ নিয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে আইএমএফ বলছে, আগের প্রতিবেদনের বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ বজায় থাকবে।
উন্নত ও উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করবে ভারত। যা আগামী অর্থবছরেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে চীনের প্রবৃদ্ধির হার কমবে। এ নিয়ে টানা দুই বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিল সংস্থাটি।
প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না পাওয়ায় ইউরোপে প্রবৃদ্ধির হার মন্থর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে নানা অর্থনৈতিক বিধিনিষিধে উৎপাদনশীল খাতে ধাক্কা লেগেছে। ইউরোপীয় অঞ্চলে চলতি বছর প্রবৃদ্ধি বাড়বে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানির প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে। এই জোনে ফ্রান্স ও স্পেনের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও খারাপ অবস্থায় পড়বে ইতালি। এদিকে উচ্চ সামরিক ব্যয়ে রাশিয়া প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হবে।
কঠোর আর্থিক নীতি, উচ্চতর ঋণের খরচ ও শ্রমবাজারের অস্থিরতার কারণে মার্কিন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। প্রবৃদ্ধি আড়াই শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ২ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে। যা আগামী বছর আরও কমে ১ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়াবে।
চলতি বছর প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুতগতিতে বিশ্বে মূল্যস্ফীতির হার কমার পূর্ভাবাস দিয়েছে আইএমএফ। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যমূল্য কম হওয়ায় মূল্যস্ফীতি লাগামের মধ্যে আসবে। চলতি বছরে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং আগামী বছর তা ৪ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করবে ভবিষ্যত সুদহার নীতির ওপর। অর্থনীতির পথ পুরোপুরি মসৃণ এমনটা বলা মুশকিল।
উদীয়মান দেশগুলোর জন্য এ বছর প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশ নির্ধারণ করেছে আইএমএফ। উন্নয়নশীল এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো অর্থনীতির দেশ হবে ভারত ও চীন।