মার্কিন শুল্কারোপে কার লাভ কার ক্ষতি?

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

ভারতের তুলনায় বাংলাদেশসহ সব প্রতিবেশীদের ওপরই মার্কিন শুল্কের বোঝা চেপেছে আরও বেশি ভার নিয়ে। আর তাই প্রতিযোগিতার বাজারে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ককে লাভজনক বলেই মনে করছেন ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা।

বিশ্ববাজারে ভারতের প্রধান প্রতিপক্ষদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের হার তুলনামূলক অনেকটাই বেশি। তাই বিশ্বজুড়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পূরক শুল্কে সমকক্ষদের তুলনায়, বিশেষ করে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে ভারত।

নতুন নীতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে ৩৭ থেকে ৫৪ শতাংশ শুল্ক গুণতে হবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও চীনকে। সে তুলনায় ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক গুণতে হবে ২৬ শতাংশ।

প্রধান প্রতিযোগীদের তুলনায় এই কম শুল্কের ফলে মার্কিন বাজারে ধীরে ধীরে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য তৈরি হবে বলে আশাবাদী ভারতের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজার কোটি ডলারের বস্ত্র, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালি ও অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি করে ভারত।

ভারতের ফরিদাবাদে অবস্থিত পি-এমপ্রো এক্সপোর্টসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান টোনি উপ্পাল বলেন, ‘শুধু ভারত নয়, সব দেশের ওপর শুল্ক আরোপ হয়েছে বলেই বিষয়টা ইতিবাচক। ক্রেতাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে পরিমাণ শুল্কের কথা আমরা এই মুহূর্তে শুনছি, নিঃসন্দেহে এটা ভারতের জন্য লাভজনক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।’

বছরে প্রায় আট হাজার কোটি ডলারের বস্ত্র আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র, যার ২১ শতাংশই চীনা পণ্য। এরপরই তালিকায় ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের পর অবস্থান ভারতের। আরও একধাপ পিছিয়ে শ্রীলঙ্কা।

ওয়াশিংটনের আমদানি শুল্ক আরোপে তাৎক্ষণিকভাবে অতিরিক্ত দাম গুণতে হবে মার্কিন ভোক্তাদের। এতে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি পণ্যের বেচাকেনা কমবে, ফলে কমবে আমদানিও। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন বস্ত্র ও তৈরি পোশাকের বাজারে ভারতের অবস্থান শক্ত হবে বলে আশাবাদী ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

টোনি উপ্পাল বলেন, ‘কিছুটা ক্ষতি তো হবেই। শুল্ক যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত কোথায় গড়ায়, সবার সেটা বুঝতে খানিকটা সময় লেগে যাবে। ক্রেতাদের দেখতে হবে তাদের পুঁজির ওপর কেমন প্রভাব পড়ছে। তবে হ্যাঁ, সাময়িকভাবে কিছু সমস্যা হবে। কিন্তু একবার স্বচ্ছতা এসে গেলে দীর্ঘমেয়াদে পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে, তা বুঝে ব্যবস্থা নিতে পারবো আমরা।’

একদিকে, মার্কিন আমদানি শুল্কের সবচেয়ে বড় শিকার চীন। অন্যদিকে, চীনের দিক থেকেও আগেই এক দফা সম্পূরক শুল্ক আরোপের জেরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা কিনতেও অতিরিক্ত খরচ গুণতে হবে চীনা আমদানিকারকদের।

এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা চীনের জায়গা দখল করবে কোন দেশ, তা নিয়ে এরইমধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নানা মহলে।

সম্পূরক শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি মোটরসাইকেল, হুইস্কি, ওয়াইনসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে এরই মধ্যে শুল্ক কমিয়েছে ভারত সরকার।

এএইচ