প্রত্যেক প্রেসিডেন্টই আমেরিকার ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এক প্রত্যয় নিয়ে ২০ জানুয়ারি নিচ্ছেন হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব। তীব্র শীতের কারণে কয়েক দশকের মধ্যে এবারই প্রথমবার শপথ অনুষ্ঠান ক্যাপিটল হিলের ভেতরে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প।
নির্বাচনী প্রচারণা থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন, একদিনেই এমন পরিবর্তন আনবেন, যে বিশ্ব তাক লেগে যাবে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ সব দেশের কাছে কম-বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনও প্রশ্ন, কেমন হবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর হঠাৎ দুর্যোগ নেমে আসবে-এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই- বলছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না, দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বৈরশাসক হয়ে যেতে পারেন তিনি, তোয়াক্কা নাও করতে পারেন মার্কিন গণতন্ত্রের।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনেরও শঙ্কা- ট্রাম্পের আশপাশে অভিজাত শ্রেণির আধিপত্য থাকায় অধিকার আর স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হতে পারে মার্কিনীদের। কানাডা, গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের ইস্যুতেও তৈরি হতে পারে অস্থিরতা।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ অধ্যাপক বারবারা এফ ওয়াল্টার বলেন, ‘ট্রাম্প পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছেন আমেরিকা ফার্স্ট। শত্রু-মিত্র দুই পক্ষের জন্যই একই বার্তা।
ট্রাম্প এমনভাবে দেশ চালাবেন, যেন মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর একমাত্র শক্তিশালী দেশ। কিন্তু এটা কোন দেশ তা মেনে নেবে না। এটা কোন মজা না, উনি দেশ আর অঞ্চল অধিগ্রহণের কথা বলছেন, ২০২৫ সালে এসেই। কারণ এই চেষ্টাতেই রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরুর জন্য যথেষ্ট।’
ট্রাম্প মনে করেন, এজেন্টগুলো বাস্তবায়নে বাঁধা হতে পারে সরকারি কর্তাব্যক্তিরা। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে সরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আরও রদবদল হতে পারে। প্রশাসনিক পদে পরিবর্তন আনতে ট্রাম্প ব্যবহার করবেন, ইলন মাস্কের সরকারি দক্ষতা বিভাগকে। অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন পড়বে তার মতাদর্শের অনুসারী সরকার।
বড় প্রতিষ্ঠান কিংবা বিলিয়নিয়ারদের করছাড়ে আইন পাশে প্রয়োজন পড়বে কংগ্রেসের অনুমোদন। সিনেট আর কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টির যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকায় সিনেটর বা প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা তার আদেশ অগ্রাহ্য করতে পারবেন না।
কিন্তু লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে কি চাইলেই ট্রাম্প দেশছাড়া করতে পারবেন কিংবা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের টার্গেট করতে কি বিচার বিভাগকে ব্যবহার করতে পারবেন কিনা, রয়েছে সেই প্রশ্নও।
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে ভিআইপি সারিতে থাকবেন ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গের মতো বিলিয়নিয়াররা। থাকবেন গুগল, অ্যাপল আর টিকটকের প্রধান নির্বাহীরা।
ক্যাপিটল হিল পরিণত হবে ধনকুবেরদের মিলনস্থল টেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সে। নির্বাচনী প্রচারণায় নানাভাবে সহযোগিতা করার পাশাপাশি ট্রাম্পের উদ্বোধনী তহবিলে লাখ লাখ ডলার দিয়েছেন বিলিয়নিয়াররা।
প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, পানামা খাল আর গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণ, গালফ ও মেক্সিকোকে গালফ অব আমেরিকা বানানো, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য ঘোষণাসহ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন আর মেক্সিকো, কানাডা থেকে আমদানি পণ্যে চড়া শুল্কারোপের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখবে, না ফলাফল উল্টো হবে- এসব নীতির কারণে সাধারণ মার্কিনিরা আসলে কতটুকু উপকৃত হবেন, উঠছে সেই বিতর্কও। অভিবাসীদের গণ প্রত্যাবাসন হলে আবাসন খাতে শ্রমিক সংকট দেখা দেবে।
অর্থনীতিবিদ রবার্ট লিনচ বলেন, ‘লাখ লাখ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছেন। এরমধ্যে ৮০ লাখই অবৈধ অভিবাসী। যারা যুক্তরাষ্ট্রের মোট কর্মক্ষম জনবলের ৫ শতাংশ। যদি তিনি এই লাখ লাখ মানুষকে দেশ থেকে বের করে দিতে সফল হন, হঠাৎ করে চাকরি দেয়ার জন্য ৮ লাখ মানুষ খুঁজে পাবেন কোথায়? বেকার যদি ৬০ লাখ মানুষও থাকে, তাও ২০ লাখ চাকরি থেকে যায়। তখন কি করবেন ট্রাম্প?’
সাধারণ মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি পণ্যে ট্রাম্পের শুল্কারোপ সিদ্ধান্তে নিত্যপণ্যের দর আরও বাড়বে। কিন্তু বিলিয়নেয়ার কর ছাড়ের কারণে আরও পাবেন স্বস্তি।