গেল কয়েকদশক ধরে হিমালয় সীমান্তের ৪ হাজার কিলোমিটার অমিমাংসিত ভূখণ্ডে সাংঘর্ষিক অবস্থানে ছিল বেইজিং ও নয়াদিল্লি। ২০২০ সালে হিমালয়ের পশ্চিমাঞ্চলে দুপক্ষের সংঘাতে ২০ ভারতীয় ও ৪ চীনা সেনাসদস্যের প্রাণহানি- এ বৈরিতাকে আরও উসকে দেয়। ভাটা পরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে, নিষিদ্ধ করা হয় শতাধিক চীন মোবাইল অ্যাপলিকেশনস।
৬ সপ্তাহ আগে এই ইস্যু নিষ্পত্তির বিষয়ে একমত হয় বেইজিং ও নয়াদিল্লি। চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিচ্ছেন, ঠিক তখন ৪ বছরের কোন্দল ভুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন ও ভারত।
এর ৬ সপ্তাহ পর, মঙ্গলবার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর যখন চীন-ভারত সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আশার বাণী শোনাচ্ছেন, তখন চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নিম্নগামিতা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে মোদি প্রশাসনে। যদিও বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণে পর, ভারতের সাথে আমেরিকা ও চীনের সম্পর্কে একটি ভারসাম্য আসতে পারে।
অর্থনীতিবিদ অমিতেন্দু পালিত বলেন, ‘ট্রাম্পের নতুন শাসনামল ভারতের জন্য খুব একটা খারাপ অভিজ্ঞতা হবে না। বরং ইতিবাচকও হতে পারে। ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র, বিশেষ করে চীনের সাথে সম্পর্ক ধরে রাখতে পারলে নয়াদিল্লি কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে। ট্রাম্পের আগের শাসনামলের শেষ কয়েকমাসে ভারত-আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে।’
রয়টার্সের তথ্য বলছে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। গেল ৭ প্রান্তিকের তুলনায় যা সর্বনিম্ন। অথচ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
একটি দেশের শিল্পখাতে উৎপাদিত পণ্য বা পরিষেবার মূল্য পরিমাপের ধারণাই হচ্ছে গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড বা জেভিএ। দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় প্রান্তিকে ভারতের গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড বা জিভিএ ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। যা গত প্রান্তিকের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ কম। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সামনে আরও কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে ভারতের সামনে।
উৎপাদন খাতেও ব্যাকফুটে এশিয়ার অন্যতম এই পরাশক্তি। সেখানেও প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদন সক্ষমতা কমেছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। সবধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ। এতে করে সীমিত হয়ে যাচ্ছে সাবান শ্যাম্পু থেকে শুরু করে গাড়ি-বাড়ি পর্যন্ত যাবতীয় পণ্যের বেচাকেনা। আরও উদ্বেগের বিষয়, গেল প্রান্তিকের তুলনায় এসব পণ্য তৈরির খরচও বেড়েছে ৬ শতাংশ হারে।
লাগামহীন ব্যয় থামাতে বিপর্যস্ত মোদি প্রশাসন। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ব্যয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। যেখানে বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায়, দ্বিতীয় প্রান্তিকে সরকারের ব্যয় ০ দশমিক ৪ শতাংশ কম ছিল। শুধু কৃষিখাতে কিছুটা আশার আলো দেখছে ভারত। বর্ষা মৌসুমে পরিমিত বৃষ্টি হওয়ায় এই খাতে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধির দেখা মিলেছে।
এরমধ্যে নয়াদিল্লির নতুন মাথা ব্যথার কারণ, ভারতীয় রুপির মান আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করা। ইতিহাসের যে কোনো সময়ের তুলনায় ডলারের বিপরীতে ভারতের রুপির মান নেমেছে সর্বনিম্নে। মঙ্গলবার ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস জানায়, এই প্রথম ডলারের বিপরীতে রুপির দর ৮৪ দশমিক সাত পাঁচে এ নেমে এসেছে। ভরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াসহ রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর সহায়তায় ডলার বিক্রি করে বাজার থেকে রুপি তুলে নেয়ায় দরপতন কিছুটা কমলেও রুপির ধারাবাহিক দরপতন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।