বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ অর্থনীতির দেশ ভারতের বাজেট ঘোষণা করলো নতুন সরকার। টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় ফেরার পর, লোকসভায় মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বসে প্রথম বাজেট অধিবেশন। বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে বাজার অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে সংস্কারের পথে কেন্দ্রীয় সরকার। এ বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে দরিদ্রতা কমানোর ওপর। নারী, কৃষক ও যুব সমাজের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি মোদি প্রশাসন নজর দিচ্ছে গ্রামোন্নয়নেও। বেকারত্বের কারণে বিশেষ করে ভারতের গ্রামাঞ্চলে অস্থিরতা বাড়তে থাকায় গ্রামোন্নয়নে ২.৬৬ লাখ কোটি রুপি বরাদ্দ দিয়েছে মোদি সরকার। শিক্ষার্থীরা পাবে ১০ লাখ রুপি পর্যন্ত ঋণ সুবিধা। রোজগার ও দক্ষতা বাড়াতে থাকছে প্রধানমন্ত্রী যোজনার পাঁচটি পদক্ষেপ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার, এবারও তা অব্যাহত থাকছে। জনকল্যাণেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বড় অঙ্কের তহবিল। বিকশিত ভারত লক্ষ্যমাত্রায় ৯টি অগ্রাধিকার, cর আবাস যোজনায় বড় ঘোষণার পাশাপাশি 'প্রধানমন্ত্রী সূর্যঘর' বিনামূল্যে বিদ্যুৎ প্রকল্পেও উৎসাহ দেয়া হয়েছে বাজেটে।
এছাড়া জাতীয় অর্থনীতির গতিবৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি খাতের বিকাশ, ডাল ও ভোজ্য তেল উৎপাদনে স্বনির্ভরতার লক্ষ্য গ্রহণ, পর্যটন খাতে উৎসাহ দানে একাধিক ঘোষণা, পারমাণবিক শক্তি গবেষণা উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মহাকাশ গবেষণার গতি সঞ্চারে এক হাজার কোটি রুপির তহবিল, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মিশন সূচনা, বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার।
শিল্প-বাণিজ্যের বিকাশে মূলধনি ব্যয়ের ১১.১১ লাখ কোটি রুপি বরাদ্দ, মুদ্রা ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ১০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২০ লাখ রুপি করা, সোনা ও রূপার বহিঃশুল্ক কমিয়ে ছয় শতাংশে নেয়া, অমৃতসর-কলকাতা শিল্প করিডোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্পাঞ্চল তৈরি এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে নিয়ম সরলীকরণ করা হচ্ছে।
উচ্চাভিলাষী বাজেটের সব প্রস্তাব পাশ করতে পারবে কি না বিজেপি, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। কারণ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ফলে সরকার গঠনের মতোই বাজেট প্রস্তাব পাশেও জোটের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে। এ অবস্থায় জোটের বিভিন্ন দল নিজ নিজ রাজ্যের জন্য অর্থ বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছে, যাতে সাড়াও দিয়েছে মোদি সরকার। রাজ্যভিত্তিক দাবির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষায় বিহারে সড়ক ও বিদ্যুৎ প্রকল্প, অন্ধ্র প্রদেশে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ডাক বিভাগের ১০০ এরও বেশি ব্যাংকিং শাখা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
গত দুই মেয়াদের তুলনায় এবার মোদি প্রশাসনের অবস্থান দুর্বল বলে পরিকল্পনা বাস্তবায়নও হয়ে দাঁড়িয়েছে আগের চেয়ে কঠিন। বড় বড় নীতি সংস্কারের ক্ষেত্রে জোটভুক্ত বাকি দলগুলোর চাপের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে।