২ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। হামাস নিমূর্লের নামে গাজায় প্রায় ৭ মাস ধরে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইল। সেনা অভ্যুত্থানে জর্জরিত আফ্রিকা। অস্থির বিশ্ব রাজনীতিতে তাই সামরিক ব্যয় পৌঁছেছে ইতিহাসের সর্বোচ্চে। গেল বছর বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় ছিল প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি ডলার। বছর ব্যবধানে ব্যয় বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৭ শতাংশ। স্টোকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট- সিপ্রির প্রতিবেদনে মিলেছে এই তথ্য।
১৩ বছর পর বিশ্বের পাঁচটি ভৌগলিক অঞ্চলেই বেড়েছে সামরিক ব্যয়। ২০২৩ সালে সামরিক খাতে ব্যয় করা বিশ্বের শীর্ষ দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। গেল বছর ওয়াশিংটন খরচ করেছে বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের ৩৭ শতাংশ অর্থ। প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করে দ্বিতীয় অবস্থানে চীন। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে যথাক্রমে রাশিয়া, ভারত ও সৌদি আরব।
২০২৩ সালে রাশিয়ার সামরিক খাতে ব্যয় ছিল মোট জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ। তবে ইউক্রেনের খরচ করতে হয়েছে জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ অর্থ। সিপ্রির গবেষকদের মতে, অসম এই যুদ্ধে পশ্চিমাদের সহায়তায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমানতালে লড়ছে ইউক্রেন। ন্যাটো জোটে ৩১ সদস্য থাকলেও মাত্র ১১টি ব্যয় করেছে তাদের মোট বাজেটের ২ শতাংশ অর্থ। গেল বছর জোটের ৩টি দেশ-রোমানিয়া, ইতালি ও গ্রিস বাদে বাকি সব সদস্যই বাড়িয়েছে তাদের সামরিক ব্যয়।
এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ সামরিক ব্যয়ের রেকর্ড গড়েছে মধ্যপ্রাচ্য। এ খাতে অঞ্চলটিতে সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ২ হাজার ৮শ কোটি ডলার ব্যয় করেছে ইসরাইল। গেল অক্টোবরে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর সামরিক খাতে দেশটির মাসিক ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোয় জোর দেয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের চতুর্থ সর্বোচ্চ ব্যয়কারী দেশ হিসেবে অবস্থান করছে ইরান।
টানা ২৯ বছর ধরে নিজেদের সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে চীন। বেইজিংয়ের আগ্রাসন থেকে মুক্ত থাকতে সামরিক খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে প্রতিবেশী ভারত, তাইওয়ান ও জাপান। শুধু তাইওয়ান ও জাপানই গেল বছর ব্যয় বাড়িয়েছে ১১ শতাংশ।
একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থানে জর্জরিত আফ্রিকায় গেল বছর সামরিক ব্যয় ছিল প্রায় ৫ হাজার ২শ কোটি ডলার। রুয়ান্ডার সঙ্গে সংঘাতে জর্জরিত কঙ্গো প্রতিরক্ষায় ব্যয় বাড়িয়েছে ১০৫ শতাংশ যা ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ। বছর ব্যবধানে সামরিক ব্যয় বাড়ানো শীর্ষ দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে দক্ষিণ সুদান। ৭৮ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত দেশটির সেনাবাহিনী ব্যয় পৌঁছেছে ১১০ কোটি ডলারে। সিপ্রির গবেষকদের ধারণা, বৈশ্বিক রাজনীতি প্রকৃতি পরিবর্তিত না হলে বাড়তে থাকবে সামরিক ব্যয়।