অস্ত্রোপচার-কেমোথেরাপি ছাড়াই শব্দ তরঙ্গে মিলবে ক্যান্সারের সমাধান

শব্দ তরঙ্গে মিলবে ক্যান্সারের সমাধান
শব্দ তরঙ্গে মিলবে ক্যান্সারের সমাধান | ছবি: সংগৃহীত
0

গত কয়েক দশক ধরে, ক্যান্সারের চিকিৎসা মানেই ছিলো হাড়ভাঙা অস্ত্রোপচার, যন্ত্রণাদায়ক কেমোথেরাপি আর তেজস্ক্রিয় রেডিয়েশন। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সাধারণত, আল্ট্রাসাউন্ড যা আমরা এতদিন শুধু রোগ নির্ণয়ে বা গর্ভবতী মায়ের ভ্রূণ দেখতে ব্যবহার করতাম, সেই উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গই এখন ক্যান্সার চিকিৎসাকে নিয়ে যাচ্ছে অস্ত্রোপচার-মুক্ত নতুন যুগে। কীভাবে এ শব্দ তরঙ্গ ক্যান্সার, টিউমার ধ্বংস করে রোগীর জীবনে নতুন আশা জাগাচ্ছে তা থাকছে প্রতিবেদনে-

বিবিসির সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে ক্যান্সার নির্মূলে আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতির বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। মূলত, দুটি প্রধান প্রযুক্তি এ পরিবর্তন আনছে, একটি হলো; হাই-ইনটেনসিটি ফোকাসড আল্ট্রাসাউন্ড (এইচআইএফইউ) , এবং অন্যটি হলো নতুন হিস্টোট্রিপসি।

এইচআইএফইউ পদ্ধতিতে, ডাক্তাররা আল্ট্রাসাউন্ডের অসংখ্য রশ্মিকে টিউমারের একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করেন। যেমন ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে সূর্যের আলো ফোকাস করলে কাগজ পুড়ে যায়, তেমনি এ কেন্দ্রীভূত শক্তি টিউমারের টিস্যুর তাপমাত্রা এক মিনিটেরও কম সময়ে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তুলে দেয়, যা ক্যান্সার কোষকে পুড়িয়ে ধ্বংস করে। একে বলা হয় থার্মাল অ্যাবলেশন। এর সুবিধা হলো, এতে আশেপাশের সুস্থ টিস্যু অক্ষত থাকে।

আরও পড়ুন:

তবে সবচেয়ে যুগান্তকারী আবিষ্কারটি হলো হিস্টোট্রিপসি। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষক ঝেন সু’র হাত ধরে এর জন্ম। এ পদ্ধতি তাপের বদলে শক্তিশালী আল্ট্রাসাউন্ড পালস ব্যবহার করে টিউমারের ভেতরে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বুদবুদ তৈরি করে। এ বুদবুদগুলো যখন বিস্ফোরিত হয়, তখন তা যান্ত্রিকভাবে ক্যান্সার কোষকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। এটি তাপের ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়ায় সুস্থ টিস্যুর ক্ষতির ঝুঁকি আরও কমিয়ে দেয়।

প্রথাগত সার্জারির পর যেখানে কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে সুস্থতার অপেক্ষায় থাকতে হয়, সেখানে এ প্রক্রিয়ায় রোগীরা এক দিনেই চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরতে পারেন। শরীরে কোনো ক্ষতের দাগ তৈরি হয় না। সেই সঙ্গে সংক্রমণ বা রক্তপাতের ঝুঁকিও কম। বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসায় এ দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে।

২০২৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ যকৃতের টিউমার চিকিৎসায় হিস্টোট্রিপসিকে অনুমোদন দিয়েছে। যা ছিলো এক মাইলফলক। এরপর ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্য ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে এটিকে তাদের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় এনএইচএস পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে। এটি লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হাজারো রোগীর জন্য নতুন আশার আলো।

আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি বর্তমানে পরীক্ষামূলক পর্যায় পেরিয়ে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও সব ধরনের ক্যান্সারের জন্য এর কার্যকারিতা বা দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন, তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের এ নতুন পদ্ধতি মানুষের জন্য ক্যান্সার চিকিৎসার চিত্রটাই পাল্টে দিতে চলেছে।

এফএস