১৯৭৭ সালে পাঠানো হলেও ৫০ বছর পরও ভয়েজার ওয়ান পৃথিবীতে তথ্য পাঠাচ্ছে শুধুমাত্র পারমাণবিক শক্তির কারণে। বিতর্কিত এই শক্তির উৎস নিয়ে পৃথিবীর আগ্রহ বেড়েছে পরিবেশ দূষণ মোকাবিলায়। এরমধ্যে মহাকাশেও বেড়েছে এর আধিপত্য। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পরিকল্পনা, ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে পরমাণু শক্তিচালিত মহাকাশযান পাঠানো হবে। ইউরোপীয়ান মহাকাশ গবেষণা সংস্থাও পরমাণু ইঞ্জিন তৈরিতে বিনিয়োগ করছে।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, যতো সৌরজগত নিয়ে গবেষণা বাড়বে, ততোই পরমাণু শক্তি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টার্টআপ জিনো পাওয়ার রেডিও আইসোটোপ নিউক্লিয়ার পাওয়ার সিস্টেম তৈরিতে এগিয়েছে। হালকা ওজনের ছোট এই সিস্টেমগুলো মহাকাশে অনেক দিন টিকে থাকবে, পরমাণু বর্জ্য থেকে শক্তি নেবে। নাসা আর ইসা চলতি দশকেই চাঁদে নিজেদের ঘাঁটি স্থাপন করতে আগ্রহী। এই ঘাঁটি ব্যবহার করা হবে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরগুলোকে শক্তি সরবরাহ করতে।
চাঁদে পরমাণু শক্তি ব্যবহার উপযোগী ভূপৃষ্ঠের বৈরি অবস্থার জন্য। অন্ধকারের জন্য বড় কোন মিশন পরিচালনা করাও কঠিন। জিনো পাওয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, চাঁদে রাত পৃথিবীতে ১৪ দিনের সমান। অনেক স্থান আছে যেখানে কখনও আলো পৌঁছায় না। আর অন্ধকারে সৌরবিদ্যুৎ তৈরি করা অসম্ভব, কারণ সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ২শ' ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে।
যেখানে মহাকাশ ভ্রমণই অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে পরমাণু শক্তি উৎপাদন যন্ত্রাংশ নিয়ে রকেট মহাকাশে পাঠানো আরও ঝুঁকি। রকেট বিস্ফোরণ হয়ে পরমাণু বর্জ্য ছড়িয়ে পড়তে পারে মহাকাশে। যে কারণে গবেষকরা রকেট কেমিকেল রিঅ্যাকশনের মধ্য দিয়ে চালু না করে পরমাণু শক্তি দিয়ে চালুর পরিকল্পনা করছেন। তবে এজন্য রকেট ইঞ্জিনগুলো আগে থেকেই পরীক্ষা করা জরুরি।
সাধারণত পরীক্ষার সময় বিস্ফোরণ হচ্ছে রকেটের। প্রকৌশলীরা পেয়ে যাচ্ছেন ডিজাইনে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয় তথ্য। এক্ষেত্রে রকেটগুলো পরমাণু শক্তি দিয়ে কাজ করার উপযোগী করে তুলতে হচ্ছে প্রকৌশলীদের। কারণ, পরমাণু ইঞ্জিন ব্যর্থ হলে অনেক বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। পাশাপাশি পরমাণু ইঞ্জিন তৈরিতে প্রকৌশলীদেরও থাকতে হচ্ছে অনেক বেশি সাবধান। যে কারণে ধীরগতিতে চলছে এই কাজ।
মহাকাশে পরমাণু শক্তিচালিত যান আর চাঁদে ঘাঁটি স্থাপনেও সময়ক্ষেপণ হচ্ছে এই কারণে। নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি বিস্ফোরণ হলে কি করতে হবে, সেটা নিয়েও চলছে গবেষণা। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতে পরমাণু ইঞ্জিন দিয়ে মহাকাশযান পাঠানোর বিষয়ে আশাবাদী তারা। প্রথমে রাসায়নিক ইঞ্জিন দিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো হবে মহাকাশযান। পরবর্তীতে গ্রহ থেকে দূরের মিশনগুলোর জন্য ব্যবহার করা হবে পরমাণু শক্তি।