ভাগ্য বদলে ‘রেইজ প্রকল্প’; নতুন কর্মসংস্থানে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন প্রবাস ফেরত কর্মীরা

ওয়েলফেয়ার সেন্টার ও প্রবাসী
ওয়েলফেয়ার সেন্টার ও প্রবাসী | ছবি: এখন টিভি
0

নিঃস্ব হয়ে দেশে ফেরত আসা অনেক প্রবাসীর ভাগ্য বদলে দিয়েছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের রেইজ প্রকল্প। এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন প্রবাস ফেরত সোয়া দুই লাখ কর্মী, যাদের এরইমধ্যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ৩০৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে অনেকে নতুন করে কর্মসংস্থানে ফিরেছেন। এ কর্মসূচির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দন মল্লিক। ১৫ বছর ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০২৩ সালে কোম্পানি ছাঁটাই করে দেশে পাঠালে প্রবাসে অর্জিত সঞ্চয় দ্রুত ফুরিয়ে যায়। অনিশ্চিত সময়ে তার জীবনে আলো হয়ে আসে প্রবাসী কল্যাণের রেইজ প্রকল্প। এ প্রকল্পে নিবন্ধন করে ওরিয়েন্টেশন ও কাউন্সেলিংয়ে অংশ নেন। ফার্মেসি খুলতে তাকে দেয়া হয় প্রণোদনার সাড়ে ১৩ হাজার টাকা।

চন্দন মল্লিক বলেন, ‘আমার ফেরত আসা, প্লেন টিকিট, পাসপোর্ট বিস্তারিত তারা দেখেছে। আমার কাগজ পত্র দেখার পরে তারা আমাকে তাদের অফিসে দেখা করতে বলেন।’

সৌদি ফেরত খুলনার শাহানারা আক্তার ও কুষ্টিয়ার মেয়ে বর্ণার গল্পও চন্দন মল্লিকের মতো। দালাল ধরে সৌদিআরব যান। একদিকে দুই মাস কাজ করে বেতন না পাওয়ার আক্ষেপ; অন্যদিকে মারধর ও খাবার বন্ধ করে দেয়ার মতো নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসেন দেশে। একজন দেন পার্লার আরেকজন মুদি দোকান।

সৌদি ফেরত শাহানারা বলেন, ‘তারা একটি পরিকল্পনা দেন। তারা ব্যবসায় কিছু পরামর্শ দেন। তাদের পরিকল্পনা ও পরামর্শে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমার বাড়ির সামনে দোকান দিব।’

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অধীনে প্রবাস ফেরত অভিবাসী কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এ প্রকল্প শুরু করা হয় ২০২৩ সালে। দেশব্যাপী ৩৫টি প্রবাসী কল্যাণ সেন্টারে এ প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

ঢাকা প্রবাসী কল্যাণ সেন্টার সহকারী পরিচালক মো. শাহ্‌জালাল বলেন, ‘বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারি রয়েছে, বেসরকারিও রয়েছে। যে সব কর্মীরা আসেন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা তাদের সেসব প্রতিষ্ঠানে সেবা নেয়ার জন্য পাঠাই।’

আরও পড়ুন:

২০১৫ সালের পর দেশ ফেরা কর্মীরা এ প্রকল্পে নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন। নিবন্ধন, ওরিয়েন্টেশন ও কাউন্সেলিং প্রদানের পর প্রত্যেক কর্মীকে দেওয়া হচ্ছে এককালীন প্রণোদনা। এরইমধ্যে প্রণোদনায় খরচ হয়েছে ৩০৪ কোটি টাকার বেশি।

প্রকল্পে সুবিধা গ্রহণের জন্য মোট নিবন্ধন করেছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ জন। সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগেরে। এরমধ্যে মন্ত্রণালয়ের ফলোআপে আছেন ২ লাখের বেশি কর্মী। তবে মারা গেছেন তাদের ৭০ জন। অতিরিক্ত ৫৩ হাজার কর্মীকে প্রকল্প সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করা সহ বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতায় চলমান রয়েছে প্রত্যাগত কর্মীদের মনো-সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরামর্শ প্রদান, কারিগরি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রকল্প পরিচালক ড. এ টি এম মাহবুব উল করিম বলেন, ‘জেলা উপজেলাভিত্তিক, তার মোবাইল নম্বর, ঠিকানা, সে কোথায়, কি অবস্থায় আছে, আগে কি অবস্থায় ছিলো তাদের পরিবর্তনগুলো পজিটিভলি আমাদের কাছে ডকুমেন্টেড করা আছে।’

প্রকল্পভিত্তিক না করে এ কর্মসূচিকে সরকারিভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া গেলে প্রবাস ফেরত আরও বেশি কর্মী সুফল পাবেন।

অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘এটিকে যদি সরকারের দিক থেকে স্থায়ী প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে ধীরে ধীরে এ কভারেজগুলো বাড়বে। তার প্রয়োজন অনুযায়ী সহযোগিতা যেন পায় সেই জায়গাটি নিশ্চিত করতে হবে।’

চলতি অর্থবছরে আরও ২০ হাজার কর্মীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশে বিদেশে কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও পুনরায় বিদেশ পাঠাতে দক্ষ করতে হবে।

এফএস