টাইফয়েড: সচেতনতা ও প্রতিরোধ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি | ছবি: এখন টিভি
0

টাইফয়েড হলো একটি সংক্রামক রোগ, যা সাধারণত স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি বেশি আক্রান্ত করে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে, যারা অপরিষ্কার খাবার বা পানি ব্যবহার করেন। টাইফয়েড জ্বর, দুর্বলতা, বমি, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা উপসর্গ তৈরি করতে পারে। শিশু, কিশোর এবং বয়সে কম-বয়সী ব্যক্তিরা এ রোগের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

টাইফয়েড টিকার বয়সসীমা কত?

টাইফয়েড ভ্যাকসিন সাধারণত ৬ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সীদের জন্য দেয়া হয়। তবে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রাপ্তবয়স্করাও ভ্যাকসিন নিতে পারেন। শিশুদের ক্ষেত্রে টিকার প্রথম ডোজ সাধারণত ৯-১২ মাস বয়সে দেয়া হয়। পরে ২-৩ বছর অন্তর পুনরায় ডোজ নেয়া যেতে পারে। টিকার বয়সসীমা ও ডোজের সংখ্যা নির্ভর করে ব্যবহৃত ভ্যাকসিনের ধরন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শের ওপর।

টিকা দিলে কী টাইফয়েড প্রতিরোধ করা যায়?

হ্যাঁ, টাইফয়েড ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। যদিও শতভাগ সুরক্ষা দেয় না। টিকা নিলে সংক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। এছাড়া, যারা ভ্যাকসিন নেন, তারা আক্রান্ত হলেও তুলনামূলকভাবে কম জটিলতা ও কম দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা ভোগ করে। শিশুরা নিয়মিত ভ্যাকসিন নিলে কমিউনিটি পর্যায়েও রোগের বিস্তার কমানো সম্ভব।

টাইফয়েডের টিকার নাম কী?

টাইফয়েডের জন্য সাধারণত দুটি ধরনের টিকা ব্যবহৃত হয়: ইন্যাক্টিভেটেড টাইফয়েড ভ্যাকসিন (Injectable Typhoid Vaccine); এটি শরীরে ইমিউন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। সাধারণত ২ বছর থেকে বড়দের জন্য ব্যবহার করা হয়। আরেকটি ওরাল টাইফয়েড ভ্যাকসিন (Oral Typhoid Vaccine); এটি মুখ দিয়ে খাওয়া যায় এবং ৬ মাস থেকে ১২ বছরের শিশুরা নিতে পারে। উভয় ভ্যাকসিনই নিরাপদ এবং প্রায়শই হাসপাতালে বা সরকারি ভ্যাকসিন সেন্টারে পাওয়া যায়।

কীভাবে টিকার আবেদন করবো?

টাইফয়েড টিকা নিতে আগ্রহী হলে প্রথমে আপনার স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা সরকারি হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন। অনলাইনে আবেদন করার সুবিধাও রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ‌‘vaxepi.gov.bd’ পোর্টালের মাধ্যমে সহজে নিবন্ধন করা যায়।

টাইফয়েডের জীবাণু |ছবি: সংগৃহীত

টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন

ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য আগেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। পোর্টালে সাইন আপ করে আপনার বয়স, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং জন্ম তারিখ প্রদান করে নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে। নিবন্ধনের মাধ্যমে আপনাকে টিকার সময় ও স্থান সম্পর্কিত তথ্য পাঠানো হয়।

টাইফয়েড জ্বরের টিকা নিবন্ধন

টাইফয়েড জ্বরের টিকা নিবন্ধন করার জন্য vaxepi.gov.bd-তে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করতে হয়। জন্ম তারিখ যাচাইসহ অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে দিলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। নিবন্ধন শেষে আপনাকে টিকার জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ও সময় জানানো হবে।

জন্ম নিবন্ধন যাচাই

টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন যাচাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিশুর বয়স নিশ্চিত না হলে ভ্যাকসিনের ডোজ সঠিকভাবে দেয়া যায় না। অনলাইনে নিবন্ধনের সময় জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে যাচাই করা হয় এবং স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সঠিক জন্ম তারিখ নিশ্চিত করতে বলা হতে পারে।

টিকা কার্ড

টাইফয়েড ভ্যাকসিন নেয়ার পর টিকা কার্ড প্রদান করা হয়। এতে ভ্যাকসিনের নাম, ডোজ সংখ্যা, ডোজ গ্রহণের তারিখ এবং পরবর্তী ডোজের সময় উল্লেখ থাকে। এটি ভবিষ্যতে মেডিকেল রেকর্ডের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের স্কুলে ভর্তি বা বিদেশ ভ্রমণের সময় এ কার্ড দেখানো প্রয়োজন হতে পারে।

vaxepi gov bd registration 2025

২০২৫ সালের জন্য ওয়েবসাইটে নিবন্ধন প্রক্রিয়া আগেভাগে শুরু হয়ে গেছে। ব্যবহারকারীরা অনলাইনে লগ ইন করে, সঠিক তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। এটি স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য সুবিধাজনক এবং টিকার সঠিক বিতরণ নিশ্চিত করে।

টাইফয়েডের লক্ষণ |ছবি: সংগৃহীত

টাইফয়েড টিকা

টাইফয়েড টিকা একটি নিরাপদ, কার্যকর এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধক ব্যবস্থা। শিশুরা, প্রাপ্তবয়স্করা এবং বিশেষ করে টাইফয়েড প্রবণ অঞ্চলে বসবাসকারীরা নিয়মিত টিকা নেওয়া উচিত। এটি শুধু ব্যক্তিগত সুরক্ষা নয়, পুরো কমিউনিটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও সাহায্য করে।

টাইফয়েড টিকার রেজিস্ট্রেশন

ভ্যাকসিন নেয়ার আগে রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জন্য সুবিধা দেয়, যাতে পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহ ও সঠিক সময়ে প্রদান নিশ্চিত করা যায়।

টাইফয়েড ভ্যাকসিন নিবন্ধন

শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক যে কেউ নিবন্ধন করতে পারেন। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকেন্দ্র আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ে জানায় কখন ও কোথায় ভ্যাকসিন নেয়া হবে। জন্মনিবন্ধন যাচাই, মোবাইল নম্বর এবং ঠিকানা সঠিকভাবে প্রদান জরুরি।

এনএইচ