করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলে ২০২০ সালে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে একতলা একটি ছোট ভবনে বসানো হয় পিসিআর ল্যাব। কুষ্টিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষের করোনা শনাক্তের কাজ চলতো এখানেই। পরবর্তীতে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকায় জেলার একমাত্র পিসিআর ল্যাবটির খবর রাখেনি কেউ। সে সুযোগে এখান থেকে চুরি হয়ে যায় একটি পিসিআর মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার ও কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। জানা যায়, গেল চার মাস যাবৎ ধাপে ধাপে চুরির ঘটনা ঘটলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিষয়টি নজরে আসে মাসখানেক আগে। আর তা প্রকাশ পায় দু-একদিন আগে। করোনার চোখ রাঙ্গানির মধ্যে এমন খবর প্রকাশ পাওয়ায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘রোগের জন্য ভর্তি হয়েছি, সব টেস্টই আমার হয়ে গেছে। এখন করোনার টেস্টটা করতে পারিনি, মেশিন নাকি হারিয়ে গেছে।’
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘পিসিআর ল্যাব যাদের তত্ত্বাবধানে ছিল, যারা এগুলো দেখভাল করছিল, মি মনে করি এটা তাদের গাফিলতি। এই পিসিআর ল্যাবের অবস্থা আজকে এরকম হবে কেন?’
অন্য একজন বলেন, ‘একটা জেলায় করোনা টেস্টের সরঞ্জাম হারিয়ে যাওয়া তো লজ্জার বিষয়।’
এরইমধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে অর্ধশতাধিক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থা ও বিশেষায়িত করোনা ইউনিট বন্ধ থাকায় তাদের জেনারেল ওয়ার্ডে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কিটসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আসলেই শুরু হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক নাজমিন নাহার বলেন, ‘এখন তিনটা পিসিআর মেশিন আছে আমাদের। যদি সরকারি নির্দেশনা আসে পরীক্ষা করার জন্য তাহলে আমাদের পরীক্ষা করার জন্য আমরা সক্ষম। তবে মেশিনপত্র আছে, কিন্তু জনবল নেই।’
পিসিআর ল্যাবে চুরির ঘটনায় এরইমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। সেখানে দায়িত্বে গাফিলতির দায়ে দায়িত্বরত দুজনকে শোকজ করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হোসেন ইমাম বলেন, ‘এই প্রস্তুতির ব্যাপারের জন্যই তো পিসিআর ল্যাবের খোঁজ করা হচ্ছিলো। তারপরই আস্তে আস্তে এই ব্যাপারগুলো সামনে আসলো। এখন আমরা সদর হাসপাতালে আমাদের ডায়াগনোসিস ক্ষেত্রে আমরা একটু ঝামেলায় আছি। করোনার রোগী যারা সছে, যাদের সাসপেক্টিভ মনে হচ্ছে তাদের আমরা বাসায় থাকতে বলছি।’
২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে পরবর্তী সময়ে কুষ্টিয়ায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ৮৫৫ জনের মৃত্যু হয়। আর আক্রান্ত হন চার হাজারের মতো রোগী। তাই এখন থেকে সতর্ক না হলে ফের করোনা সংক্রমণ মহামারি হিসেবে দেখা দিতে পারে।