২৩ বছরের পুরনো বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ৫৮ দশমিক এক পাঁচ বর্গ কিলোমিটার। পুরাতন পৌরসভার আয়তন ছিল ২৫ বর্গকিলোমিটার। পুরাতন অংশের বেশিরভাগই ঘিঞ্জি শহর। রয়েছে ডোবা, নালা আর নর্দমা। যেখানেই মূলত বংশবৃদ্ধি হচ্ছে মশার। এছাড়া শহরের মধ্যে থাকা বিভিন্ন খাল এখন পরিণত হয়েছে মশার প্রজননের কেন্দ্রবিন্দুতে।
এ অবস্থায় এবারও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ বরিশালবাসী। দিন কিংবা রাত স্বস্তি নেই কখনই। তবে সন্ধ্যা নামলে তীব্র হয় মশার আক্রমণ। উৎপাত থেকে বাঁচতে কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্রিক ব্যাটের ব্যবহার বাড়লেও দমন করা যাচ্ছে না ছোট এই পতঙ্গ।
স্থানীয়রা বলেন, 'এবার মশার উপদ্রব অনেক বেশি। দিনে রাতে একই অবস্থা।'
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাওয়া যায় ফগার মেশিনের শব্দ। ড্রেন, নর্দমা সব জায়গায় চলে মশক নিধন। তারপরেও স্বস্তি মেলেনা নগরবাসীর। এ অবস্থায় সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তারা। তবে মশা নিধনে যথাসাধ্য চেষ্টার করার কথা বলছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
স্থানীয়রা বলেন, 'সরকারিভাবে যা দিচ্ছে তা আসলেই কাজে আসছে না। সিটি কর্পোরেশন থেকে যে পরিমাণ ঔষধ দিচ্ছে তাতে মশার উপদ্রব কমছে না।'
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক মাসুম বলেন, 'আমি তো নির্বাচনের পর থেকে মশা নিয়ে যুদ্ধ করছি বলা চলে। দেখা যায় মশা ডিম পেরে আসে কয়েক হাজার কয়েক লাখ। কিন্তু আমরা মশা মারছি উপরের গুলো। লার্ভা ধ্বংস করতে পারছি না। মশা কমাতে আগে আমাদের খাল, ড্রেন পরিষ্কার করতে হবে যেখানে মশা ডিম পারে।'
২০২৩ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিল ৮ হাজার ৩৭ জন। এসময় মারা যায় ১৬৭ জন। একই সময়ে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩৮ হাজার ৬৪ জন। আর বিভাগে মারা গেছেন ২০৯ জন। এ অবস্থায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হবার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, 'গত বছর প্লাটিলেট এর জন্য রোগী ঢাকায় প্রেরণ করতাম। এবছর অন্য রোগীকে প্রেরণ করতে হবে না। আমাদের ডেঙ্গু ওয়ার্ড ও আমাদের জনবল দিয়ে রোগীদের সেবা দিবো।'
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে মশক নিধনের জন্য কীটনাশক ক্রয় বাবদ প্রস্তাব করা হয় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাবদ ৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।
স্বাস্থ্য বিভাগ এর তথ্য অনুসারে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬ জন। এ সময়ে ভর্তি হয়েছিল ৩৪ জন। বিভাগের মধ্যে পিরোজপুর, বরগুনা ও ভোলায় গত বছর আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ছিল অন্য জেলাগুলোর থেকে বেশি। এ অবস্থায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।