সুগন্ধি মসলা লবঙ্গ: স্বাদ-গন্ধে ভরপুর প্রাকৃতিক উপাদান

লবঙ্গ
লবঙ্গ | ছবি: সংগৃহীত
1

গাছের ফুলের কুঁড়িকে শুকিয়ে তৈরি করা হয় এক প্রকারের মসলা। লবঙ্গ নামের এ মসলা ব্যবহার করা হয় খাদ্যদ্রব্যে। যার ব্যবহারে খাবারে সুন্দর গন্ধ ও স্বাদ বেড়ে যায়। খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও খালি মুখেও খাওয়া যায় এ মসলাটি।

লবঙ্গের উৎপাদন

প্রথমবার লবঙ্গ পাওয়া যায় ইন্দোনেশিয়ায়। তবে বর্তমানে পৃথিবীর সর্বত্র এ মসলা ব্যবহার করা হয়। প্রধানত ইন্দোনেশিয়া ও মাদাগাস্কারে চাষ করা হয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০০৫ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর ৮০ শতাংশ লবঙ্গ উৎপাদন হতো ইন্দোনেশিয়ায়।

এছাড়া ভারতীয় উপমহাদেশে লবঙ্গের ব্যবহার ধীরে ধীরে বেড়ে যায়। উত্তর আমেরিকার মেক্সিকোর খাদ্যেও এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কাতেও লবঙ্গের চাষ হয়ে থাকে।

লবঙ্গের ব্যবহার

এ মসলাটি রান্না করা খাবারের সঙ্গে আস্ত বা গুঁড়া অবস্থায় ব্যবহার করা যায়। গন্ধ বেশি হওয়ায় অল্প পরিমাণে দিলেই পুরোটা ছড়িয়ে যায়। এছাড়া অনেকে রান্না ছাড়াও খালি মুখেও খেয়ে থাকে। খালি মুখে খাওয়া লবঙ্গ শরীরের অনেক উপকারে আসে বলে অনেকে এভাবেই খেয়ে থাকে। এছাড়াও লবঙ্গের তেল উপকারী একটি পণ্য। অনেকে লবঙ্গের তেলও ব্যবহার করে থাকে।

রান্নার সঙ্গে লবঙ্গ

তরকারিতে অতিরিক্ত স্বাদ এবং ঝাঁঝালো ভাব আনতে লবঙ্গ ব্যবহার করা হয়। এটি আস্ত অবস্থায় বা গুড়া করে তরকারিতে দেয়া যায়। তবে অনেকে তরকারি চুলায় দেয়ার সময়ই লবঙ্গ দিয়ে দেয়। আবার অনেকে রান্না শেষ পর্যায়ে এলে লবঙ্গ দিয়ে থাকে। আবার অনেকে আস্ত লবঙ্গ ব্যবহার না করে তা গুড়া করেও রান্নায় ব্যবহার করে থাকে।

রান্না ছাড়া লবঙ্গ

অনেকেই লবঙ্গ চিবিয়ে খায়। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ রাতে ঘুমানোর আগে এক থেকে দুইটি লবঙ্গ চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। আবার অনেকে চা এর সঙ্গে লবঙ্গ দিয়ে পান করে। সেক্ষেত্রে এক কাপ গরম পানিতে দুই বা তিনটি লবঙ্গ দিয়ে পান করতে হবে। বেশি লবঙ্গ ব্যবহার করা উচিত হবে না। মধুর সঙ্গে লবঙ্গ পাউডার মিমিয়ে খাওয়া যায়। এটি শারীরিক অনেক উপকারে আসে।

চা এর সঙ্গে লবঙ্গ |ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিন খাওয়া লবঙ্গের পরিমাণ

পরিমাণ মতো লবঙ্গ খেলে যেমন উপকার হয় তেমনি পরিমাণের চেয়ে বেশি লবঙ্গ খেয়ে ফেলতে তা শরীরের ক্ষতিও করে। সেক্ষেত্রে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি লবঙ্গ খাওয়া যেতে পারে। এর চেয়ে বেশি লবঙ্গ খাওয়া বা রান্নায় ব্যবহার করা উচিত নয়।

লবঙ্গ তেল

লবঙ্গ থেকে এক ধরনের তেল পাওয়া যায়। এটি ব্যবহার করলে দাঁতের ব্যথা, ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যথা, চুল পড়া এবং হজমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। লবঙ্গ তেল ব্যবহারের সময় তা ক্যারিয়ার তেলের (উদ্ভিদ থেকে পাওয়া তেল) সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত। তবে এটি গিলে ফেলা উচিত নয়, কারণ এটি বিষাক্ত হতে পারে।

লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা

প্রাচীন আয়ুর্বেদিক একটি উপাদান হলো লবঙ্গ। যা হজম শক্তির গুণের জন্য পরিচিত। এটি শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না- নানা স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবেও কাজ করে।

হজমে সাহায্য: লবঙ্গ হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

আলসার প্রতিরোধ: পাকস্থলীতে মিউকাস উৎপাদনে সাহায্য করে, যা আলসারের ঝুঁকি কমাতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: লবঙ্গে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

জটিল রোগ প্রতিরোধ: হৃদরোগ, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতেও লবঙ্গ ভূমিকা রাখে।

মুখের স্বাস্থ্য: দাঁতের ব্যথা বা ইনফেকশন কমাতে এবং মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে লবঙ্গ উপকারী।

শরীরের ক্লান্তি দূর করে: দিনের শেষে ক্লান্তি জীবনের ওপর প্রভাব ফেলে। লবঙ্গ ক্লান্তি দূর করে শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে।

শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা দূর করে: রাতে লবঙ্গ খেলে শ্বাসতন্ত্র পরিষ্কার হয়, যা রাতে ভালো ঘুম নিশ্চিত করবে।

যৌন স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান: টেস্টোস্টেরন হরমোন যৌন উত্তেজনা এবং যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। আর এ লবঙ্গে থাকা বিশেষ উপাদান টেস্টোস্টেরনের নিঃসরণ বাড়ায়।

লবঙ্গ |ছবি: সংগৃহীত

লবঙ্গ খাওয়ার অপকারিতা

অতিরিক্ত পরিমাণে লবঙ্গ ব্যবহার করলে গ্যাস্ট্রিক বা পেটের অস্বস্তি হবে। আবার গর্ভবতী নারীদের জন্য লবঙ্গ নিরাপদ হলেও পরিমাণে বেশি হয়ে গেলে তা ক্ষতি করে। সেজন্য সীমিত পরিমাণে লবঙ্গ খেতে হবে।

খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা

বমি ভাব কমায়: খালি পেটে লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে তা মুখের লালার সঙ্গে মিশে যায়। এতে নির্দিষ্ট কিছু এনজাইম তৈরি হয়। যা বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে।

দাঁতের ব্যথা কমায়: লবঙ্গ ব্যবহারে মুখ ও মাড়ির প্রদাহ কমায়। সেজন্য এখন অনেক টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনে লবঙ্গ থাকার কথা বলা হয়।

ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে মুক্তি: ঠান্ডাজনিত সর্দি, সাইনাস, ব্রঙ্কাইটিস, ভাইরাল ইনফেকশন কমাতে পারে লবঙ্গ।

মাথাব্যথা কমায়: ইউজেনল হলো লবঙ্গের বেদনানাশক বৈশিষ্ট্য। নিয়মিত খালি পেটে লবঙ্গ খেলে মাইগ্রেন ও মাথাব্যথা কমে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: লবঙ্গ হজমে সহায়তা করে। একইভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে অ্যাসিডিটি কমাতেও সাহায্য করে। লবঙ্গ হজম শক্তি বাড়ায়।

এসএস