পরিবেশ ও জলবায়ু
0

যেসব কারণে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যু

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা। চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে প্রাণহানি ঘটেছে ৫০ জনের। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বজ্রপাতের আগে পূর্বাভাস দেয়া কঠিন, তবে সতকর্তার মধ্যদিয়ে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি এই দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মত গবেষকদের।

মেঘের আঁধার ফুঁড়ে তীব্র আলোর ঝলকানি। এক অপার্থিব সুন্দর, অথচ ভয়ংকর। আকাশে বিজলি চমকানোর দৃশ্য এখন আর উপভোগ্য নয়। জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের প্রভাবে যা রূপ নিয়েছে আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়-বৃষ্টিতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ এই বজ্রপাত।

দিনে দিনে বাড়ছে আতঙ্ক। চিহ্নিত হয়েছে নতুন দুর্যোগ হিসেবে। বজ্রপাত তিন ধরনের হয়ে থাকে। তবে এরমধ্যে সবচেয়ে আতঙ্কের নাম ক্লাউড টু গ্রাউন্ড, যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি।

আবহাওয়া অফিসের গবেষণা বলছে, বজ্রপাতের হার সবচেয়ে বেশি সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায়। দেশে বর্ষা মৌসুমে বজ্রপাতের হার গড়ে ৫১ শতাংশ। যার শিকার বেশিরভাগই কৃষক এবং খোলা মাঠে কাজ করা শ্রমজীবী।

সুনামগঞ্জ হাওরের একজন কৃষক বলেন, 'প্রতি বছরই হাওরে ১৫ থেকে ২০ জন মারা যায় বজ্রপাতের কারণে। কিন্তু এসব ভয় নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়। পরিবারের আর সবাইকে নিয়ে তো চলতে হবে।'

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, বেশিরভাগ বজ্রপাতই উত্তর-পশ্চিম থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ধাবিত হয়। যার স্থায়ীত্ব হতে পারে ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের একটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৯৬১ জনের। আর ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৫১০ জন।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বিজলি চমকানো দেখামাত্র ৩০ সেকেন্ড গণনার মধ্যে পুনরায় যদি দেখা যায় সেক্ষেত্রে ৩০ মিনিট পর্যন্ত নিরাপদে ঘরে অবস্থান করতে হবে। যাকে বলা হয় ৩০ বাই ৩০ বিধি।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, 'তাপপ্রবাহের পর যদি বজ্রঝড় সংঘটিত হয় তাহলে এই বজ্রঝড়ের উচ্চতা অনেক উপরে উঠতে পারে। এ সময়ের বজ্রপাতের শক্তিমাত্র একটু বেশিই থাকে।'

বজ্রপাতের আগে সঠিক পূর্বাভাস দেয়া জটিল প্রক্রিয়া বলছে তারা। তবে বেশকিছু সতকর্তা মেনে চললে মৃত্যু এড়ানো যেতে পারে। সেইসঙ্গে জোর দিতে হবে জনসচেতনতা তৈরিতে।

ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, 'বিভিন্ন রকমের বজ্রপাত যেহেতু হয় সেক্ষেত্রে টাইম এন্ড লোকেশন স্পেসিফিক বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেয়া একটু জটিল যে কোন জায়গায় আঘাত হানবে। তবে বজ্রপাত হতে পারে একটিমাত্র মেঘ থেকে। অথবা অনেকগুলো মেঘ থেকে বা পাশাপাশি অনেকগুলো মেঘ তৈরি হয়ে স্কয়ার লাইন গঠন করে সেখান থেকেও বজ্রপাত হতে পারে।'

বজ্রপাত নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য বলছে, চলতি বছর এপ্রিল মাসে মারা গেছেন ২০ জন। আহত হয়েছেন ৩ জন। এছাড়া মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বজ্রপাতে।

গবেষকরা বলছেন, এই দুর্যোগ থেকে বাঁচতে প্রয়োজন বজ্র নিরোধক গাছ রোপণ, থান্ডার অ্যারেস্টার স্থাপনসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা বাড়ানো। পাশাপাশি বজ্রপাতের সময় জলাশয়ের পাশে অবস্থান না করা, রাবারের জুতা ব্যবহার করা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন তারা। এই দুর্যোগের ক্ষতি নিরসনে স্থানীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জোরালো ভূমিকা রাখারও পরামর্শ তাদের।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, 'এখানে স্থানীয় সরকার হচ্ছে সবচেয়ে উপযুক্ত। কারণ তারা মানুষের সাথে থাকে, সেজন্য তাদের সম্পুক্ত করতে হবে। এটা আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তর বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ। তবে মূল কাজটি হলো স্থানীয় সরকারের।'

ঋতু পরিবর্তনের কারণে বাড়ছে তাপপ্রবাহ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে জলীয়বাষ্পের আধিক্য বজ্রপাত বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাই বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে বৃক্ষরোপণ বাড়ানোসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ গবেষকদের।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর