বিদেশে এখন
পরিবেশ ও জলবায়ু
0

তাপমাত্রা বাড়ছে বিশ্বের, বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ

শাহনুর শাকিব

চলতি শতাব্দীতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের। শঙ্কা সত্যি হলে বিশ্বজুড়ে বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

গেল শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ছিলো প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ইইউ'র ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের তথ্য বলছে ১৯০০ সালের পর এই প্রথম এমন তাপমাত্রা দেখলো বিশ্ববাসী যা অব্যাহত ছিলো শনিবারেও। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অস্বাভাবিক তাপমাত্রার একের পর এক মাসের কারণে ২০২৩ সাল পরিণত হবে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছরে।

২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ। উদ্দেশ্য, পৃথিবীকে রক্ষায় কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির গড় দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনা। বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে একমত হলেও ৮ বছরেও বাস্তবায়ন নেই পরিকল্পনার।

জাতিসংঘের জলবায়ু কর্মসূচির সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, কার্বন নিঃসরণ কমাতে শিল্পোন্নত দেশগুলোর পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি শতাব্দী নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা গড়ে বাড়তে পারে ২.৫ থেকে ২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা প্রতিশ্রুত তাপমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ। এভাবে চলতে থাকলে বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়ার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির গড় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখতে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে ৪২ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে হবে। তবে প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে এই নিঃসরন কমার হার মাত্র ১৪ শতাংশ। ১৮৫০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৮০ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণের জন্য দায়ী শিল্পোন্নত জি-টোয়েন্টির দেশগুলো। যাদের শীর্ষে রয়েছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এমনকি কোনো দেশই এখন পর্যন্ত গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। তাই ক্ষোভ ঝড়েছে জাতিসংঘ মহাসচিবের কণ্ঠে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, 'গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা কমানোর প্রতিশ্রুতি যা দেয়া হয়েছিলো-তার বেশিরভাগই রক্ষা হয়নি। এতে বিপন্ন হয়েছে জীবন। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়েছে প্রাণহানি। উন্নত রাষ্ট্রের ব্যর্থ নেতৃত্বের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণের হাজারো সুযোগ হারিয়ে এখন হুমকির মুখে পৃথিবী।'

চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে কপ-টোয়েন্টি এইট সম্মেলন। তবে এর আগে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য কিছুটা আশা বয়ে এনেছে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, আসন্ন সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১০০টি দেশকে আড়াই হাজার কোটি ডলারের সহায়তা দিতে পারে ধনী দেশগুলো। যেখানে প্রতিটি দেশ পাবে কমপক্ষে ১ কোটি ডলার যা ব্যবহার করা হবে বন্যা, খরা ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশগুলোর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে।

এসএস