প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, এবার বোর্ডে জিপিএ–৫ পেয়েছে মাত্র দুই হাজার ৭০৭ জন শিক্ষার্থী, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কম। এবার বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ এক হাজার ৯৯৭ জন, অংশ নেয় ৯৯ হাজার ৫৭৬ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৪৭ হাজার ৬৫৭ জন। মেয়েদের পাসের হার ৫৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ছেলেদের ৪২ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এমন বিপর্যয়ের বিষয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান মো. শামছুল আলম বলেন, ‘অন্যান্য সময়ে কেন্দ্রের সংখ্যা অনেক বেশি থাকতো। এবার ১৬২টি কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। কেন্দ্রের কারণে অনেক শিক্ষার্থী সুবিধা পেত, এবার সে সুযোগ ছিল না। এছাড়া ইংরেজিতে পাসের হার মাত্র ৬৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, উচ্চতর গণিতেও ফল খারাপ। ইংরেজিতে ফেলের হার বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
এদিকে কুমিল্লা বোর্ডের অধিভুক্ত ছয় জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম পাসের হার নোয়াখালী জেলায়, মাত্র ৪০ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
অন্যদিকে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে কুমিল্লা জেলা, পাসের হার ৫২ দশমিক ১৫ শতাংশ। এবার বোর্ডে শতভাগ পাস করেছে মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান, আর শূন্যভাগ পাস করেছে নয়টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ছয়টির শিক্ষার্থী সংখ্যা দশের নিচে।
ফল হাতে পেয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী রায়হান মিয়া বলেন, ‘ইংরেজি পরীক্ষায় প্রশ্ন কঠিন ছিল, বিশেষ করে রিডিং অংশটা। আমরা অনেক চেষ্টা করেও ভালো লিখতে পারিনি। সেখানেই আমাদের অনেকের ফল খারাপ হয়েছে।’
মেয়েদের ফল তুলনামূলক ভালো হলেও, অনেকেই প্রত্যাশিত গ্রেড না পেয়ে হতাশ। কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিয়া হোসাইন বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আগের মতো প্রশ্ন আসবে ভেবে। কিন্তু ইংরেজি ও গণিত দুইটাই ছিল নতুন ধাঁচের।’
তবে শিক্ষকরা বলছেন, বোর্ড এবার একটু কঠোর হয়েছে, একইসঙ্গে প্রশ্নপত্র এবং মানবণ্টনের ক্ষেত্রেও। এছাড়াও পরীক্ষার হলে কোনো অসদুপায়কে ছাড় দেয়া হয়নি।
আরও পড়ুন:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গাজী মোহাম্মদ গোলাম সোহরাব হাসান বলেন, ‘অনলাইন ও অনিয়মিত ক্লাসের কারণে শিক্ষার্থীদের বেসিক দুর্বল হয়েছে। উচ্চতর গণিতে প্রশ্নের ধরনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী পুরোনো স্টাইলে প্রস্তুতি নিয়েছিল। এতে প্রভাব পড়েছে ফলে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল বাশার ভুঁইয়া বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছু কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পরিচিত পরিবেশে পরীক্ষা দিতে পারেনি। দূরের কেন্দ্রে যেতে গিয়ে অনেকেই মানসিক চাপে পড়েছে। তবে এবারের ফলাফলকে বিপর্যয় বলা যাবে না এটাই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রকৃত ফলাফল।’
তিনি বলেন, ‘যারাই পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী ছিল ওই সব শিক্ষার্থী ভালো করেছে। এমন দিনেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করে দেখিয়ে দিয়েছে। কারণ তারা নিয়মিত পাঠদানে মনোযোগী ছিল।’
শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান মো. শামছুল আলম বলেন, ‘দিন শেষে এবারের ফলাফল হঠাৎ এভাবে কমে যাওয়া উদ্বেগজনক। শতভাগ অকৃতকার্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনায় বসবো, কারণগুলো শুনবো। কিভাবে ভবিষ্যতে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানকে ঘুরে দাঁড়াতে হয় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হবে।’





