ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের একদিন পর বাংলাদেশে ভারতের ভিসা সেন্টারগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর ঠিক চার দিন পর ১১ই আগস্ট সেন্টারগুলো খুলে দেয়া হয়। সেন্টার খুললেও আগের আবেদনের ভিসা ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে, নেয়া হচ্ছে না নতুন কোন আবেদন। আবার ভিসা থাকা সত্ত্বেও বিমানবন্দরে আটকের ভয়ে ভারতমুখী হচ্ছেন না অনেকেই।
এতেই সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ-ভারত আকাশপথে যোগাযোগ। ঢাকা থেকে চেন্নাই, কলকাতা ও দিল্লি রুটে ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ যাত্রীও হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই রুটগুলোতে বন্ধ হচ্ছে ফ্লাইট চলাচল।
ঢাকা থেকে ভারতের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার। ঢাকা-কলকাতা রুটে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করা নভোএয়ার যাত্রী সংকটে প্রথমে ফ্লাইট নামিয়েছিল তিনে। তাতেও ৫০ শতাংশ যাত্রী পাচ্ছিল না এয়ারলাইন্সটি। বাধ্য হয়েই গেলো ১৬ সেপ্টেম্বর থেকেই পুরোপুরি ফ্লাইট বন্ধ করে তারা।
নভোএয়ারের হেড অব মার্কেটিং ন্ড সেলস মেজবাউল ইসলাম বলেন, 'যাত্রী থাকলে ফ্লাইট চলবে। না থাকলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর অপ্রিয় হলেও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমাদের যেটা হয়েছে, আমাদের তো ভারতে শুধু কলাতায় বিমান যেতো। প্রতিদিন একটা করে ফ্লাইট যেতো। এই যে ভিসাটা প্রথমে বন্ধ হলো, তারপর যাত্রী কমা শুরু হলো। আমর সপ্তাহে সাতটা ফ্লাইট থেকে সপ্তাহে একটা ফ্লাইট করলাম। তারপরও দেখা যায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি যাত্রী পাচ্ছি না। তা ভাড়া আর কত কমানো যায়। যাত্রী না থাকলে ভাড়া কমিয়ে লাভ কী। তো সেই বিবেচনায় আমরা দেখলাম যে আর কমানো সম্ভব হচ্ছে না। তখনই বাদ দিয়েছি।'
কলকাতা রুটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে ২১টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। যাত্রী সংকটে এই এয়ারলাইন্সটিও চট্টগ্রাম কোলকাতা ফ্লাইট বন্ধ করেছে। আর চেন্নাই রুটে সপ্তাহে ১১টি ফ্লাইট থেকে কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচে।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংখ্যা) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, 'আগে যেকোনো ফ্লাইটে নরমালি লোক ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ। সেখানে এখন পাঁচটা ফ্লাইট পরিচালনা করার পর লোন চলে পড়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। সমস্যার সমাধান না হলে, প্যাসেঞ্জার লোড কমতে থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অপারেশন কস্ট পূরণ হয় না।'
চাপে পড়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও। আগে কলকাতা রুটে সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করতো বিমান। এখন সেই সংখ্যা নেমেছে সাতে। এছাড়া কমেছে চেন্নাই ও দিল্লি রুটের ফ্লাইট সংখ্যা। ফ্লাইট কমিয়েও কাঙ্ক্ষিত যাত্রী মিলছে না তাদের।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, 'কলকাতা থেকে আমাদের ফুল ফ্লাইট আসছে। আসার প্রেশারটা সুন্দর, কিন্তু যাওয়ার প্রেশারটা কম ছিল। ৩৫ থেকে ৪০ বা ৪২ শতাংশের মতো ছিল যাওয়ার সময় যাত্রী। এটা আস্তে আস্তে এতটু বাড়ছে। এটা আরও কিছুদিন আমরা দেখবো। তারপর আমাদের ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে।'
এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, ভিসা জটিলতায় এমন দীর্ঘসূত্রতা চলতে থাকলে এই রুটগুলো থেকে স্থায়ীভাবে ব্যবসা গুটিয়ে বিকল্প রুট খুঁজতে হবে তাদের।