পরিষেবা
অর্থনীতি
0

নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার ট্রান্সফরমার, লোডশেডিং-ভুতুড়ে বিলে বিপর্যস্ত গ্রাহক

ময়মনসিংহে প্রতিমাসেই নষ্ট হচ্ছে পল্লী বিদ্যুতের ২০ শতাংশ মিটার। ওয়ার্কশপে নষ্ট পড়ে আছে কোটি কোটি টাকার ট্রান্সফরমার। অভিযোগ উঠেছে কমিশন নিয়ে কিছু অসাধু কর্মকর্তা প্রতিবছরই কিনছেন শতশত কোটি টাকার মানহীন যন্ত্রাংশ। এতে বাড়ছে লোডশেডিং অন্যদিকে গ্রাহককে প্রতিমাসেই গুণতে হচ্ছে ভুতুড়ে বিদ্যুৎবিল।

ময়মনসিংহের চর গুপদিয়া গ্রামের বাসিন্দা এবাদুল হক। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ৯ মাসের নাতনীকে নিয়ে বিপাকে পড়েন। গরমে কষ্ট পোহাতে হয়। বিদ্যুৎ কখন আসবে তাও অনিশ্চিত। লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়েও প্রতিমাসে গুণতে হয় পল্লী বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল। তবুও মিলছে না সেবা, নষ্ট হচ্ছে বৈদ্যুতিক মিটার, পুড়ে যাচ্ছে ট্রান্সফর্মার।

তিনি বলেন, 'আগে কারেন্ট বিল আসতো ২০০-৩০০ আর এখন আসে ৫০০-৭০০ টাকা। কিভাবে তারা বিল করে তা আমরা বুঝি না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ ঘণ্টাও আমরা কারেন্ট পাই না। কিন্তু দ্বিগুণ।'

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পরিত্যক্ত বিদ্যুৎ মিটারে জ্বলছে বাতি, মিটার পরিত্যক্ত হলেও সেখানে উঠছে ইউনিট। মিটার মেরামত রুমে পড়ে আছে হাজার হাজার নষ্ট বিদ্যুৎ মিটার। যা মেরামত শেষে উচ্চ মূল্যে আবারও বিক্রি করা হবে গ্রাহকের কাছে। পল্লী বিদ্যুতের খোদ এজিএম জানালেন, নিম্নমানের মিটার হওয়ায় প্রতি মাসে ২০ শতাংশ মিটার নষ্ট হচ্ছে। ভুতুড়ে বিদ্যুৎবিলের অন্যতম কারণও এই ত্রুটিপূর্ণ মিটার।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর এজিএম মো. শাহানূর হোসেন বলেন, 'নিম্নমানের মিটারের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করুক আর না করুক বিল কিন্তু উঠতেই থাকে। অর্থাৎ গ্রাহককে অহেতুক বিল পরিশোধ করতে হয়। এই যন্ত্রাংশগুলো কিনে পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এতে তারা বিপুল পরিমাণ কমিশন বাণিজ্য করে।'

মিটার মেরামত রুমে পড়ে আছে হাজার হাজার নষ্ট বিদ্যুৎ মিটার। ছবি: এখন টিভি

পল্লী বিদ্যুতের মেকানিক্যাল রুমে সরেজমিনে দেখা যায়, নষ্ট পড়ে আছে কোটি কোটি টাকার ট্রান্সফরমার আর তা মেরামতে কাজ করছে একদল মেকানিক। তাদেরই একজন ওয়ার্কশপ অ্যাসিস্ট্যান্ট মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। চুক্তিভিত্তিক নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এই ওয়ার্কশপে।

তিনি বলেন, 'আগে একটি ট্রান্সফরমারের ৩ বছরের ওয়ারেন্টি থাকলেও এখন থাকে একবছর। তবে কয়েক মাস যেতেই পুড়ে যাচ্ছে। নিম্নমানের তার, ট্রান্সফর্মার ওয়েলসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের কারণে সকাল-সন্ধ্যা কাজ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছি না।'

বিদ্যুতের যন্ত্রাংশ কেনার ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হয়। এখানে কোনো নিম্নমানের মানের যন্ত্রাংশ কেনার সুযোগ নেই বলে জানান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, 'একটা মিটার যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে। আমি প্রায় ৪ লাখ ২৫ হাজার গ্রাহকের বিল করি। এর মধ্যে ৪০-৫০টা মিটার নষ্ট হতেই পারে। তাছাড়া আর এই মিটারে কোনো সমস্যা নেই। এগুলো অনেক উন্নত মানের।'

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১, ২, ৩ এর আওতায় গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ১৬ লাখ। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং ভোগান্তিহীন সেবা পাবার প্রত্যাশা পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর