রাজধানীর মুগদাপাড়া এলাকার প্রায় অধিকাংশ ভবনে গেলো ফেব্রুয়ারিতে প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার বসিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। এর পর থেকেই পরবর্তী তিন মাসে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়েছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
মুগদা, মালিবাগ, খিলগাঁও, উত্তরা এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, পোস্টপেইড মিটারে যেখানে একমাসে বিল আসতো হাজার টাকার নিচে, সেখানে প্রিপেইড মিটার বসানোর পর একহাজার টাকা রিচার্জ করলে ফুরিয়ে যাচ্ছে এক সপ্তাহেই। ভুতুড়ে বিলের অভিযোগ করছেন অনেক পোস্টপেইড গ্রাহক।
তারা বলেন, আগে বিল আসতো ৩০০-৫০০ টাকা। আর এখন বিল দ্বিগুণের চেয়েও বেশি আসে। ১ হাজার টাকা রিচার্জ করলে মিটার চার্জ নিয়া যায়। ৭০০-৮০০ পাওয়া যায়। বাকি টাকা পাই না। অর্ধেক টাকার কোনো হুদিস নাই।
একজন গ্রাহক ৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে তার বিল আসবে ৩৯৪ টাকা। আর ১ হাজার ইউনিট ব্যবহার করলে ধাপে ধাপে বেড়ে তার বিল দাঁড়াবে ১২ হাজার ৬৬০ টাকা। এর মধ্যে প্রথম ৭৫ ইউনিট ৩৯৪ টাকা, পরবর্তী ১২৫ ইউনিট ৯০০ টাকা, তৃতীয় ধাপের ১০০ ইউনিট ৭৫৯ টাকা, চতুর্থ ধাপের ১০০ ইউনিট ৮০২ টাকা, পঞ্চম ধাপের ২০০ ইউনিট ২ হাজার ৫৩৪ টাকা, আর ৬০০ ইউনিট থেকে পরবর্তী প্রতি ইউনিটের জন্য গুণতে হবে ১৪ টাকা ৬১ পয়সা। অর্থাৎ, ৫ টাকা ২৬ পয়সার ইউনিট বেড়ে হবে সাড়ে ১৪ টাকা। সেইসঙ্গে ধাপে ধাপে বড় হবে বিদ্যুৎ বিলের অংক। ১১ হাজার ২৩৩ টাকার বিলের সঙ্গে যোগ হবে ২১০ টাকা ডিমান্ড চার্জ, ৪০ টাকা মিটার ভাড়া, ৫ শতাংশ ভ্যাট, বিলম্ব হলে মোট বিলের আরও ৫ শতাংশ। বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো বলছে, এই হিসেবের বাইরে এক টাকাও বাড়তি নেওয়ার সুযোগ নেই তাদের।
ডেসকো নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, 'মিটারের ডিমান্ড চার্জ ১ টাকাও বাড়ে নাই। মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি করা আছে। উনারা প্রতি মাসে সংস্থাগুলোর সাথে আলোচনা করে যে কারও অস্বাভাবিক বিল আছে কি না। আর ভুতুড়ে বিল খুবই কম।'
তবে প্রিপেইডে যে টাকা কেটে রাখা হচ্ছে, পোস্টপেইড বিলের মতোই তার পূর্নাঙ্গ হিসেব চান গ্রাহকরা। আপত্তি ডিমান্ড চার্জে নিয়েও।
এক গ্রাহক বলেন, আমরা মিটার কিনে আনলে তারা এটার চার্জ নিবে কেন। ১২০০ টাকা রিচার্জ করলাম, সাথে সাথে ৩০০ টাকা কেটে নিয়ে গেছে।
মো. জাকির হোসেন আরও বলেন, 'ভুতুড়ে বিল হচ্ছেই না, বরং চাইলে ওয়েবসাইটে আইডি খুলে বিস্তারিত তথ্য গ্রাহকরা জানতে পারবেন।'
এ তো গেলো বিদ্যুৎ বিলের গাণিতিক হিসাব। তবে রাঙামাটির শাবানা বেগমের ১১০০ টাকার বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যে ৬৪ হাজার টাকা হয়ে গেলো, তার উত্তর মিলবে কোথায়?
যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রিপেইড মিটার বসানোর পর পেছনের বকেয়া বিল মিলে টাকার অংক বড় হয়েছে বলে জানান রাঙামাটি বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো জালাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, 'এটা আসলে নতুন করে বিল চাপিয়ে দেওয়া না। আগের রিডিংটা থেকেই বিল করা হয়েছে।'
এমন ব্যাখ্যা দিয়ে যখন দায় সারেন কর্তপক্ষ, তখন বেশিরভাগ সময়ই সুরহা হয় না অভিযোগের। আর তাতেই কি বছরের পর বছর চলতে থাকে ভুতুড়ে বিলের আলোচনা?
রাঙামাটির শাবানা বেগমের ১১০০ টাকার বিল হয়ে গেছে ৬৪৩৬৫ হাজার
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, 'ভোক্তাকে যদি সন্তুষ্ট করা না যায়, তাহলে অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে বলা যাবে না। চার্জ আগে দিয়ে রাখলে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ গ্রাহক খরচ করবে তার বিল দিবে।'
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, 'আমার ৪ কোটি মিটারের মধ্যে ১০ টা মিটারে সমস্যা হতেই পারে। এ নিয়ে গাফলতি হলে আগেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গ্রাহকরা সঠিক প্রক্রিয়ায় অভিযোগ জানালেও এখনও সে পথ খোলা আছে।'
দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। আর তীব্র গরমে এবার সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট। এর পরেও লোডশেডিং করতে হয়েছে দুই হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি।