পরিষেবা
অর্থনীতি
0

২০ লাখের বেশি টিনধারী নিষ্ক্রিয়

শাহনুর শাকিব

সঠিক সময়ে রিটার্ন দিতে এনবিআরের নানা পদক্ষেপ ও বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রায় এক কোটি টিনধারীর বিপরীতে জানুয়ারি শেষে রিটার্ন জমা পড়েছে মাত্র ৩৭ লাখ। এনবিআর বলছে, টিনের সংখ্যা বাড়লেও বড় একটি অংশ নিষ্ক্রিয়।

চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ৯৯ লাখ ৭০ হাজার ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার বা টিন নেয়া হয়েছে । বিপরীতে আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে ৩৭ লাখ ৬২ হাজার। রিটার্ন দেননি বাকি ৬২ শতাংশই। রিটার্ন থেকে আয় ৫ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি রিটার্ন পড়েছে খুলনা অঞ্চলে প্রায় ৩ লাখ, কুমিল্লায় ২ লাখ ৫২ হাজার, ২ লাখ ৩৮ হাজার ঢাকা কর অঞ্চল-৩ এ এবং ২ লাখ ৩৫ হাজার অঞ্চল-১২ তে।

আয়কর আইন অনুযায়ী নভেম্বরের পর রিটার্ন জমা দিতে একদিন দেরি হলেও আয়করের সর্বনিম্ন ৪ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। রিটার্নদাতা বঞ্চিত হবেন কর অব্যাহতি ও বিনিয়োগে রেয়াতসহ নানা সুবিধা থেকে। ব্যাংক বীমা কিংবা আর্থিক লেনদেনসহ ৪৩টি সেবা নিতে রিটার্ন জমার প্রাপ্তি স্বীকার বাধ্যতামূলক।

এতো কড়াকড়ি আরোপের পরও প্রত্যাশিত রিটার্ন জমা না পড়ায় দুই মাস সময় বাড়ায় এনবিআর। নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা হয় ২২ লাখ আর বাড়তি দুই মাসে জমা পড়ে ১৫ লাখ ৩৭ হাজার। সব মিলিয়ে রিটার্ন জমা পড়ে মোট টিনের সাড়ে ৩৭ শতাংশ।

আয়কর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনও অনেক দাপ্তরিক কাজ হচ্ছে রিটার্ন ছাড়াই। সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ মানুষের ঘর পর্যন্ত সেবা প্রদানকারী অনেক দপ্তরেই এখনও শতভাগ নিশ্চিত হয়নি রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকার। এরমধ্যে অনেকেই ব্যাংক লেনদেন বা অন্য কোনো প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে টিন খুলেছেন, অনেক টিনধারী মারা গেছেন, কেউ বিদেশে কিংবা টিনধারী রিটার্ন দিতে বাধ্য এমন কোনো দাপ্তরিক কাজ বা সেবা নেননি। এ কারণেই অকার্যকর পড়ে আছে অনেক টিন, যার মালিককে পাওয়া যাচ্ছে না বছরের পর বছর। এমন টিনের সংখ্যাও ২০ লাখের বেশি।

এনবিআর বলছে, ২০২০ সালে রিটার্নদাতা ছিল ২১ লাখ। সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা পড়ে সাড়ে ২৮ লাখ। এরমাঝে চলতি বছর টিন বেড়েছে ১৬ লাখ, আর রিটার্ন বেড়েছে সাড়ে ৭ লাখ। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। বলেন, সক্ষমতা বাড়লেও সবাইকে ট্যাক্সের আওতায় আনা চ্যালেঞ্জ। তাই ধাপে ধাপে এগোচ্ছেন তারা।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, 'বাংলাদেশে ট্যাক্স দেয়া লোকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু সবাইকে খুব দ্রুত ট্যাক্স নেটের ভিতরে নিয়ে আসা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে আমরা কর বাড়িয়ে যাচ্ছি।'

তবে রাজস্ব ও কর আদায় বাড়াতে ডিজিটালাইজেশন বাস্তবায়ন এবং ফাঁকি দেয়ার পথ বন্ধের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। সিপিডি বলছে, রিটার্ন বাড়াতে আরও সহজ করতে হবে ই-রিটার্ন। একই সঙ্গে কর বাড়াতে বড় করদাতা ও ব্যবসায়ীদের সব লেনদেনের সঙ্গে সংযোগ থাকতে হবে এনবিআরকে।

সিপিডি বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'যিনি আমদানি করছেন তিনি হয়তো সেখানে ডিউটি দিচ্ছেন। ব্যাংক, এনবিআরের যে কাস্টমস, বাংলাদেশ ব্যাংক এগুলোর মধ্যে একটা সমন্বিত আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার করা হলে কার আদায় বাড়বে।'

চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। প্রথম ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে এনবিআর আদায় করেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকা।

এসএস