মৌসুমের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে দেশের তাপমাত্রা। তাপপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় গনগনে সূর্যে জীবন ওষ্ঠাগত, পুড়ছে প্রকৃতিও। আবহাওয়ার এমন বিরূপ প্রভাব সরাসরি পড়ছে ফসলের খেতে। শুকিয়ে যাচ্ছে ফসল, সবজির খেত।
নীলফামারীতে এবছর ৮৩ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩ টন ধান। যে ধান ঘরে তুলতে লাগবে আরও ২৫ দিন সময়। তবে চলমান দাবদাহে মাঠের সেসব ধান চিটা হওয়ার শঙ্কায় উত্তরাঞ্চলে চাষিরা। স্বাভাবিক সময় দুইদিন পরপর সেচ দিতে হলেও এখন প্রতিদিন ৫ থেকে ৯ ঘণ্টা দিতে হচ্ছে সেচ। যাতে অন্যান্য সময় বিঘায় ১৮শ' থেকে ২ হাজার টাকা খরচ হলেও বর্তমানে সেই খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৫শ থেকে ৪ হাজার টাকায়।
চাষিদের একজন বলেন, 'তীব্রতাপে এখন এক বিঘা জমিতে চার হা
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, 'উপর থেকে শুরু করে মাটি পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি সেচ দিয়ে সব সময় পানি ধরে রাখতে পারি তাহলে কিন্তু এই অংশের তাপমাত্রা কমে যাবে।'
যশোরে ধানের মাঠে পানি ধরে রাখতে পারছে না চাষিরা। সেচ দিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। চলতি বছর ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে যে ধানের চাষ হয়েছে সেখান থেকে আসবে ১৬৫ কোটি টাকা। তবে চলমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে নষ্ট হবে ১০ ভাগ ফলন। যাতে ক্ষতির পরিমাণ দাড়াঁবে ১৬ কোটি টাকা।
এদিকে ময়মনসিংহের ২ লাখ ৬৩ হাজার ৯০ হেক্টর জমির অধিকাংশ ধান কেটে ঘরে তোলার সময় হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত গরমে মিলছে না শ্রমিক। চাষিরা বলছেন, মাঠে অতিরিক্ত সেচের পাশাপাশি বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি। যাতে এবছর লোকশানের শঙ্কায় তারা।
কুমিল্লার মাঠজুড়ে নষ্ট হচ্ছে সবজি, হলুদ হয়ে যাচ্ছে পাতা। বাড়ছে পোকার আক্রমণ। যাতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে বাড়ছে খরচ। এদিকে, তীব্র গরমে বেশিক্ষণ মাঠে কাজ করতে পারছেন না চাষিরা। তবে উৎপাদন খরচ বাড়ায় হাড়ভাঙা এই খাটুনির পরেও কতটুকু দাম পাবেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
কুমিল্লার মুরাদনগর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. নূর আলম বলেন, 'কৃষকরা যেটা করে তা হলো তারা এলোমেলো বালাইনাশক ব্যবহার করে।'
এদিকে খুলনার ডুমুরিয়ায় মাঠে থাকা শাক-সবজির ফলন ভাল হলেও গরমে তা নষ্ট হচ্ছে। অতিরিক্ত সেচ দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না সবজি। বাড়তি ব্যয়ের বোঝাতো আছেই সেইসাথে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়ায় নতুন করে গীষ্মকালীন সবজি চাষ করতে পারছেন না চাষিরা।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, 'যেখানে আমাদের ৮ থেকে ১০ বার সেচ দিতে হতো সেখানে এখন ১২ থেকে ১৫ বার সেচ দিতে হচ্ছে। এতে খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।'
এদিকে নওগাঁয় সবজির মাঠে দেখা দিয়েছে পচন রোগ। যাতে কিটনাশকের ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত সেচ। প্রতিমাসে খরচ বেড়েছে ২৮শ' থেকে ৩ হাজার টাকা। যা গত বছর ছিল ১৪শ' থেকে ১৫শ' টাকা।