কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
অর্থনীতি
0

রংপুরে ৮ কোটি লিটার সরিষার তেল উৎপাদনের আশা

রংপুর বিভাগে চাষ করা সরিষার পুরোটা কাজে লাগানো গেলে প্রায় ৮ কোটি লিটার তেল উৎপাদন হবে। যার বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

নীলফামারীর সৈয়দপুরের হাসান মোল্লা তেল মিল। আধুনিক মেশিনে তৈরি ঘানিতে সরিষা ভেঙে এক পাশ দিয়ে সরিষার তেল আর অন্যপাশ দিয়ে খৈল বের হয়। মানসম্মত এই তেল বোতলজাত এবং খোলা প্রক্রিয়ায় পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাহকের কাছে।

অন্যদিকে ক্রেতারা প্রয়োজনমতো খৈল নিয়ে যাচ্ছেন। বছরের শেষ সরিষা ভাঙানোর পর এখন নতুন সরিষার অপেক্ষা মোল্লার মতো রংপুর বিভাগের অসংখ্য তেলের মিলে।

বিভাগের অনেক জেলাতে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে চোখ জুড়ানো দৃশ্য। কোন জমি আর পড়ে থাকে না। আমন থেকে বোরো ধানের মাঝের সময়ে পড়ে থাকা জমি এখন সরিষা ফুলে ছেঁয়ে যায়। শীতের ফসল বাদ দিলে দুই ধানের মৌসুমের মাঝে বাড়তি আয় হাজারও কৃষককে উৎসাহ জোগাচ্ছে।

সৈয়দপুরের হাসান মোল্লা তেল মিলে কাজ করছেন একজন শ্রমিক

এ মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ পড়ছে। এক বিঘা থেকে পাওয়া তিন থেকে পাঁচ মণ সরিষার দাম ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়েও একেকজন কৃষকের দুই থেকে তিনগুণ লাভ থাকছে।

সরিষা চাষিরা বলেন, '১ বিঘা জমিতে ৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আর সরিষা যদি ভালো হয় তাইলে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ থাকে। সয়াবিন তেলের তো কঠিন দাম, ১৯০ টাকা কেজি। আর এই সরিষা থাইকা তেল খাইতেও পারুম, দুই ছটাক বেচতেও পারুম।'

প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদার ৮৫ ভাগ আমদানিনির্ভর। এরমধ্যে পাম তেল ১৩ লাখ ও সয়াবিন তেল প্রায় ৫ লাখ টন আমদানি হয়। এই আমদানি নির্ভরতা ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনতে ২০২২ সালে পরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার। দেশে সয়াবিনের চাষ সহজ না হওয়ায় সরিষাকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করছে কৃষি বিভাগ। প্রতি বছর কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।

রংপুর বিভাগের দুই কৃষি অঞ্চল রংপুর ও দিনাজপুরে এবছর প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে। সম্ভাব্য দুই লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ টন সরিষা উৎপাদন হবে। সাধারণত সরিষা থেকে ৪০ শতাংশ তেল পাওয়া যায়। সেই হিসাবে রংপুরের বিভাগের দুই অঞ্চলে এই উৎপাদিত সরিষার পুরোটা তেল উৎপাদনে যদি ব্যবহার করা যায় তবে সম্ভাব্য তেলের পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি লিটার হবে।

দেশে এখন বিনা ৪, ৯, ১১ ও বারি ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ এবং সরিষার দেশিয় জাত টরি ৭ চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বারি ১৪ জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আর সবশেষ সংযোজন বারি ১৮ তে দুইয়ের নিচে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস. এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, 'বারির স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে, ভালো একটা ফসল পাচ্ছি। আমরা এই তেল খাচ্ছি। বাইরে থেকে তেল কিনতে হচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে এবং ডলার সংকটটাও হ্রাস পাচ্ছে। এ কারণে সরকার কিন্তু প্রণোদনা কর্মসূচির মধ্যে সরিষাকে অন্তর্ভূক্ত করেছে।'

এ বছর সরিষা থেকে শুধু দেড় হাজার কোটি টাকার তেল বা কৃষকের লাভের পাশাপাশি উৎপাদিত সরিষা থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ বা এক লাখ টন খৈল পাওয়া যাবে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর