শিল্প-কারখানা
অর্থনীতি
0

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রায় ২০০ শত বছরের পুরোনো চা বাগান

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রায় ২০০ শত বছরের পুরোনো চা বাগান। নতুন করে গাছ না হওয়া এবং চা বাগানের জায়গায় অন্য আবাদ করার ফলে দিন দিন এ শিল্পটি সংকুচিত হয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। এছাড়া সেকশন সমূহে চায়ের পরিবর্তে রাবার চাষাবাদ, টিলা কাটা, ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে কমছে চায়ের ভূমিও। প্রায় প্রতিটি বাগানে কাঁচি দিয়ে পাতা চয়ন ও অপরিষ্কার ফ্যাক্টরির কারণে হচ্ছে না গুণগত মান সম্পন্ন চা।

এছাড়াও দেশের বাইরে থেকে অবৈধ পথে চা আসা ও পঞ্চগড়ের মানহীন চা উৎপাদনকে দায়ী করছেন অনেকে। চা উৎপাদনের খরচের তুলনায় কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে চা, এতে করে অনেক বাগানই তাদের শ্রমিকের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। বন্ধ হচ্ছে অনেক চা বাগান। ফলে এ শিল্প নিয়ে শংকায় রয়েছেন চা সংশ্লিষ্টরা, সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। তবে চা বোর্ড বলছে দেয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা।

দেশের ১৬৯টি চা বাগানের মধ্যে ১৪৮টিই সিলেটে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারেই রয়েছে ৯২টি। চা আবাদের কথা বলে বাগান কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে চা বাগান সমূহে করা হয় রাবার চাষ, চা বাগানের জমিতে বৃক্ষ রোপণ, মাছ চাষ, আনারসহ অন্যান্য চাষাবাদের ফলে সেসব এলাকায় চায়ের উৎপাদনে ধস নামছে দিন দিন।

এছাড়া বাগানের ছায়াদানকারী গাছগাছালি কেটে ফেলা, বাগানের আনাচে কানাচে টিলাভূমি কেটে ফেলা, চা বাগানের বিভিন্ন ছড়ার নানা স্থান থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে দিন দিন বিনষ্ট হচ্ছে বাগানভূমি। প্রায় সবগুলো বাগানেই কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে পাতা। এতে করে রাউন্ড দেরি আসাসহ চায়ের গুণগত মান কমছে।

বাগানের মালিকদের একজন বলেন, ‘চা বাগানগুলো এখন মালিকদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। না পারে কাটতে না পারে রাখতে।’

বায়ারদের একজন বলেন, ‘বর্তমান যে বাজার এই বাজারে বায়ারদের অংশগ্রহণ খুবই কম।’

এদিকে শ্রমিক অসন্তোষ ও শ্রমিকের মজুরি না দেয়ায় কাজ বন্ধ থাকায় এবছর কমেছে চা উৎপাদন। এছাড়াও এককেজি চায়ের তৈরি খরচ ২২০ টাকা হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে ১৬০ টাকা মূল্যে। এতে করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধও করা যাচ্ছেনা। এছাড়াও চা উৎপাদনের সকল পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। এতে করে বাগান মালিকরা পড়েছেন সমস্যায়।

কমলগঞ্জ পাত্রখলা চা বাগানের ম্যানেজার দীপেন সিংহ বলেন, ‘মজুরি না দেয়ায় কাজের প্রতি একটা স্থিবরতা চলে আসছে।’

চায়ের প্রকৃত দাম না পাওয়া ও সঠিক সময়ে ব্যাংক থেকে ঋণ না পাওয়াকে চা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান ন্যাশনাল টি কোম্পানির এ উর্ধ্বোতন কর্মকর্তা।

এনটিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘উৎপাদনের খরচ থেকে অকশন মূল্য কম পাওয়া এইটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে আমরা কোম্পানির ফান্ড বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি।’

আর চায়ের দাম বাড়ানো ও ব্যাংক ঋণ চা বাগানেই খরচ করলে চা বাগানগুলো ঘুরে দাঁড়াবে দাবি এই চা শ্রমিক নেতার।

বাগান মালিকরা বলছেন সবগুলো দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। চা একটি পরিবেশ বান্ধব ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। তারা বলেন, বাজার দরে আটা কিনে ৯৫ পয়সা কেজি দরে শ্রমিকদের দিতে হয়। তারউপরে বিদ্যুৎ, গ্যাস, সারসহ সকলপণ্যের দাম বেড়েছে, বেড়েছে ব্যাংক ঋণের সুদও। এতে করে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক বাগান ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

কাঁচি দিয়ে চা পাতা ও অন্যান্য সমস্যার কথা স্বীকার করে চা বোর্ডের এই উর্ধ্বোতন কর্মকর্তা জানালেন সমাধানের কথা।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘চা বোর্ড থেকে সকল ধরনের সমস্যা সমাধান করা হবে পাশাপাশি সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

চা সংশ্লিষ্টদের অভিমত সরকার, বাগান মালিক, ম্যানেজমেন্ট ও শ্রমিক মিলে যথাযথ উদ্যোগ না নিলে এশিল্প ধ্বংস হয়ে কয়েকলক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে।

ইএ