কালের সাক্ষী এই চিমনিটি জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের। চলতি ২০২৪-২৫ মৌসুমের আখ মাড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এক বছর পর জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় চিমনিটি।
ভারি যন্ত্রগুলো ঘষে মেজে ঠিক করা হয়েছে। এখন বারবার চালিয়ে ঝালিয়ে নেয়া হচ্ছে কোথাও কোনো ত্রুটি আছে কি না। নজরে পড়লে সঙ্গে সঙ্গেই মেরামত করা হচ্ছে। গত ১৫ নভেম্বর কারখানার চালিকাশক্তি বয়লারে অনানুষ্ঠানিকভাবে আগুন দেয়া হলেও কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে ১৩ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হবে।
৬৮ বছরের পুরোনো এই চিনিকলে ৬৬ বছর ধরে একনাগাড়ে চিনি উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। পুরোনো সব যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ চলছে এত বছর ধরে। প্রয়োজন মতো দুই একটি যন্ত্র প্রতিস্থাপন হলেও পুরো কারখানা আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি।
ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘অ্যাক্সেসরিজ যেসব ক্ষয় হয়েছে সেগুলো আমরা আমাদের নিজস্ব ওয়ার্কশপের মাধ্যমে মেরামত করছি। এরপর ফিটিংসের কাজ করেছি আমাদের নিজস্ব যেসব কর্মীদের মাধ্যমে। সদর দপ্তরের অনুমতি নিয়ে আমরা কিছু কাজ করেছি।’
ঠাকুরগাঁও চিনিকল সচল রাখতে চলতি মৌসুমে প্রায় ৬ হাজার একর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। এ থেকে ৮৫ হাজার টন আখ পাওয়ার আশা চিনিকল কৃষি বিভাগের। এই পরিমাণ আখ দিয়ে ৬৫ থেকে ৭০ দিন পর্যন্ত চিনিকল চালু রাখা সম্ভব। সে অনুযায়ী চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার টন। গত বছর আখ পাওয়া গিয়েছিল ৭৪ হাজার টন এবং চিনির উৎপাদন ছিল চার হাজার ২১ টন। কারখানা চালু ছিল ৫৫দিন। এবছর প্রতি টন আখের মূল্য ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. আবু রায়হান বলেন, ‘প্রান্তিক চাষিরা ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে দ্রুত রিটার্ন চায়। বছরে তিনটা ফসল থেকে যে আয়টা হয় সেটা যদি আমরা দিতে পারি তাহলেও আমরা কিছু চাষি ধরে রাখতে পারব।’
দেশে প্রতিদিন চিনির চাহিদা প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টন। সেখানে ঠাকুরগাঁও সুগার মিল উৎপাদন করতে পারে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টন। মূলত আখের অভাবেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না। সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, কৃষি অধিদপ্তরের সাথে আলোচনা করে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা গেলে ১০০ থেকে ১২০ দিন মিলটি চালানো সম্ভব। সেটি সম্ভব হলে মিলটিকে আর লোকসান গুণতে হবে না।
ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান কবির বলেন, ‘চাষি পর্যায়ে আখ চাষের আগ্রহ আমরা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। চাষিদের যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দরকার তা আমরা দিচ্ছি। আমরা চাষিদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখন যে জনবল আছে সেটি দিয়ে আমরা মিলটি চালানোর চেষ্টা করছি এবং তাদের দিয়ে ওভারহোলিং ও মেইনটেন্যান্স করে এই সীমিত বাজেটের মধ্যে আমরা মিলটিকে রেডি করেছি। আগামী যে মাড়াই মৌসুম আসছে আমরা তার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তত রয়েছি।’
সাধারণত এক জমি থেকে বছরে সাধারণত তিন থেকে চারবার ফসল পাওয়া যায়। সেখানে আখ চাষে জমি প্রস্তুত থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত সময় লাগে ১৪ মাস। আর এ কারণেই দিন দিন আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।