শিল্প-কারখানা
অর্থনীতি
0

দুই দশকেও শিল্প সহায়ক হয়নি নোয়াখালী বিসিক শিল্পনগরী

প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই দশকেও শিল্প সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়নি নোয়াখালী বিসিক শিল্পনগরীতে। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংকট, চুরি-ছিনতাই ও নিরাপত্তাহীনতায় বরাদ্দকৃত প্লটগুলো বছরের পর বছর খালি পড়ে আছে। হাতে গোনা যে কয়টি শিল্প প্রতিষ্ঠান সচল, নানা সমস্যায় সেগুলোও অনেকটা বন্ধের পথে। শিল্প উদ্যোক্তা আর স্থানীয়দের কাছে নতুন আতঙ্ক শিল্পনগরীর ভেতর অবৈধভাবে গড়ে উঠা ব্যাটারি গলিয়ে সিসা তৈরির কারখানা। তবে বিসিক কর্তৃপক্ষ যেন কিছুই দেখছেন না।

২০০৬ সালে নোয়াখালী সদরের সোনাপুরে পনেরো একর জমিতে গড়ে ওঠে বিসিক শিল্পনগরী। পরিকল্পিত শিল্পায়নে বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে ১০৮টি প্লট নিয়ে শুরু হয় শিল্পনগরীর কার্যক্রম।

যেখানে গড়ে উঠে ফার্মাসিটিক্যালস, বেকারি, মুদ্রণ শিল্প, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ ছোট-বড় প্রায় ৪০ টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। কর্মসংস্থান হয় কয়েক হাজার মানুষের। তবে দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়কের বেহাল দশা, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংকটসহ নানা সমস্যায় বন্ধ হয়ে যায় অনেক প্রতিষ্ঠান। সচল প্রতিষ্ঠানেও কমে উৎপাদন।

শিল্প উদ্যোক্তাদের একজন বলেন, 'এখানে যে গ্যাসের লাইন আছে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো গ্যাসের প্রেসার থাকে না।'

আরেকজন বলেন, 'পানির লাইন আছে তবে পানি সবসময় থাকে না যার ফলে আমাদের প্রোডাকশনের ক্ষতি হচ্ছে।'

সম্ভাবনাময় এই শিল্পনগরীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার পণ্য উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে বরাদ্দকৃত ৯৯টি প্লটে ৫৮টি অনুমোদিত শিল্প ইউনিট থাকলেও উৎপাদনে আছে মাত্র ১৬টি। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বিভিন্ন সময় বন্ধ হয়ে গেছে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো।

একজন শিল্প উদ্যোক্তা বলেন, 'রাস্তার বেহাল দশায় মালামাল ঠিক মতো নেয়া আনা করা যাচ্ছে না।'

নোয়াখালী বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদ উল্যাহ বলেন, 'একটা ইন্ডাস্ট্রি জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও সিকিউরিটি যেটা এখানে তেমনভাবে নেই। যার ফলে অনেক উদ্যোক্তারা আসলেও বেশিদিন থাকছে না।'

এরই মাঝে সম্প্রতি শিল্প নগরীতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ব্যাটারি গলিয়ে সিসা তৈরির কারখানা। গভীর রাতে পোড়া ব্যাটারি থেকে নির্গত রাসায়নিক ধোঁয়া বাতাসে মিশে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে স্থানীয়দের। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন জটিল রোগে।

পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, পরিবেশের ক্ষতি করে এমন অবৈধ কারখানা বন্ধে পদক্ষেপ নেবেন তারা। আর পুরো শিল্পনগরীর নিরাপত্তায় টহল জোরদারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস পুলিশ প্রশাসনের।

নোয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিহির লাল সরদার বলেন, 'এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে কোনোভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা থাকতে পারবে না। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।'

নোয়াখালীর সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, 'বিসিক অঞ্চলের তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটে। আমরা টহল বাড়িয়েছি। চুরি ঘটনা পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।'

নানা সমস্যায় জর্জরিত শিল্পনগরীর বেহাল দশা নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি বিসিক নোয়াখালী কার্যালয়ের উপ-মহা ব্যবস্থাপক মুনতাসির মামুন। তবে সমস্যাগুলো সমাধান হলে সম্ভাবনাময় নোয়াখালী বিসিক শিল্পনগরী আবারো ঘুরে দাঁড়াবে, তৈরি হবে কর্মসংস্থান এমনটা প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।

ইএ