প্রতি বছর চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং বাড়ছে গড়ে চার থেকে সাত শতাংশ। সে হিসাবে ২০৩০ সাল নাগাদ হ্যান্ডলিং বাড়বে অন্তত তিন মিলিয়ন। বন্দরের বর্তমান অবকাঠামো সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সেই চাহিদা পূরণ বেশ কঠিন।
আগামী ১০০ বছরের বাণিজ্য চাহিদা পূরণে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৩ সালে বে-টার্মিনালর নির্মাণ প্রকল্প নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ একযুগে নকশা ও মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া দৃশ্যমান অগ্রগতি শূন্য।
তবে গেল বছরের জুনে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দিলে গতি পায় এই প্রকল্প। যদিও প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকায় হয়নি ঋণ চুক্তি।
অবশেষে রোববার (২০ এপ্রিল) ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বে-টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন হয় একনেকে। প্রকল্পটির দুটি অংশের মধ্যে সমুদ্রে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল খনন, স্রোতরোধী প্রাচীর নির্মাণ এবং সড়ক ও রেলসংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে।
এতে প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক। যার নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৯ সালে। এতে প্রকল্পের অপর গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে চারটি টার্মিনাল নির্মাণের বিদেশি বিনিয়োগেও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা কর্তৃপক্ষের।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ওমর ফারুক সচিব বলেন, ‘বে টার্মিনালের ডিপিটিটা অনুমোদন হলেই বিশ্বব্যাংকের সাথে লোন চুক্তি হয়ে যাবে সরকারের। এরপর ঠিকাদার নিয়োগ থেকে শুরু করে অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা যে পদক্ষেপ নিচ্ছি তার জন্য মাতারবাড়ি অন্যতম।’
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে কয়েকগুণ। ২৪ ঘণ্টা বড় জাহাজ ভিড়লে চট্টগ্রাম হবে বিনিয়োগে ও পোর্ট হাব। তবে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের আহ্বান ব্যবসায়ীদের।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘বে টার্মিনালকে চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে। এইটাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে কাজ করতে দিতে হবে। প্রতি ১ মাস পর পর এর প্রগ্রেস নিতে হবে এবং টার্গেট দিতে হবে। তাহলে আগামী ৫ বছরে এইটার আশা করা যেতে পারে।’
নাব্যতা কম হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ মিটারের গভীরতার বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। বহির্নোঙর সর্বোচ্চ জোয়ারের ভিড়তে পারে ১১ মিটারের জাহাজ। বে-টার্মিনালে ১২ মিটারের বেশি গভীরতার বড় জাহাজ ভিড়বে বলে আশা কর্তৃপক্ষের।
তবে জোয়ার–ভাটার ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে বে-টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টা ১২ মিটারের জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করতে হলে কুতুবদিয়া থেকে বহির্নোঙর পর্যন্ত ৩০ নটিক্যাল মাইল চ্যানেল খনন করতে হবে বলছে বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য জাফর আলম বলেন, ‘আমরা কত বড় জাহাজ চাচ্ছি। কত গভীরতার জাহাজ চাচ্ছি। যদি ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ হয় তাহলে অনায়াসে আসতে পারবে। যদি ১২ মিটারে জাহাজ চাই তাহলে কতুবদিয়া চ্যানেল থেকে আসার জন্য একটা বড় অংশে ড্রেজিং করতে হবে। যা খুবই ব্যয় বহুল।
বিদেশি টার্মিনাল অপারেটররা টার্মিনাল নির্মাণে বিনিয়োগ করলেও চ্যানেল খননের ব্যয় বহন করতে হবে বন্দরকে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে সব কিছু বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।