আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

প্রথমবারের মতো কয়েক কোটি টাকার গাড়ি ধ্বংস করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস

চট্টগ্রাম

চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আমদানি করা ৭৫টি গাড়ি ধ্বংস শুরু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, খালাস না হওয়া এসব গাড়ি দীর্ঘ সময় বন্দর ও কাস্টম হাউসের নিলাম শেডের জায়গা দখলে রাখায় পণ্যজট তৈরি হচ্ছে। সেই সঙ্গে এসব গাড়িতে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকায় বিআরটিএর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ধ্বংস করা হচ্ছে এই সব গাড়ি।

কাস্টম হাউসের নিলাম শেডে স্তূপ করে রাখা লোহার টুকরো, চেসিস, গাড়ির চাকাসহ নানা যন্ত্রাংশ দেখে বোঝার উপায় নেই একসময় এগুলো ছিল সব দামি গাড়ি। অযত্নে বহু বছর পড়ে থাকা এসব গাড়ির এক সময় বাজারমূল্য থাকলেও এখন কেবল স্ক্র্যাপ। ব্যাপক আয়োজনে কাস্টম হাউসের নিলাম শেডে চলছে এমন ৭৫টি গাড়ি ধ্বংসের কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে ৬০টি গাড়ি ধ্বংসের কাজ শেষ। সবগুলো গাড়ি কাটা শেষ হলে উন্মুক্ত নিলামে ভাঙারি হিসাবে বিক্রি করা হবে।

একজন শ্রমিক বলেন, 'গত ১৫ থেকে ২০ দিন আগ থেকে গাড়ি ধ্বংস করা শুরু করেছি। দুই জন এই কাজ করছি। বড় গাড়িগুলো কাটতে ২ দিন লাগছে। আর ছোট গাড়ি কাটতে একদিন লাগছে।'

ধ্বংস করা গাড়ির মধ্যে আছে জিপ, প্রাইভেট কার, পিকআপ, মাইক্রো, ড্রাম্প ট্রাক, স্টেশন ওয়াগন, সুইপার লরিসহ দামি সব গাড়ি। এর আগে খালাস না করা চলাচল অযোগ্য গাড়ির যন্ত্রাংশ কেটে বিক্রি করলেও এবারই প্রথম পুরো ধ্বংসের উদ্যোগ নিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব গাড়ি আর সড়কে চলাচলের উপযুক্ত নয় বলে বিআরটিএ প্রতিবেদন দিয়েছে। এ কারণে গাড়িতে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে দুর্ঘটনা এড়াতে ও বন্দরে ইয়ার্ড খালি করে পণ্যজট কমাতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, 'গ্যাস বিস্ফোরণ হয়ে বন্দরের ভেতরে একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন একটা রিস্ক থাকে। সেই রিস্ক থেকে বাঁচতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর সাথে বন্দরে ইয়ার্ড খালি করার বিষয় থাকে। সবকিছু মিলিয়ে এবং বিআরটিএর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।'

যদিও বিডাররা বলছে, বিশেষ কমিটি গঠন করে যথাসময়ে নিলামে বিক্রি করা হলে বিপুল অর্থ ব্যয়ে আমদানি করা গাড়ি ধ্বংস করতে হতো না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে, ডলার ব্যয় করে আনা গাড়ি ধ্বংস হওয়ায় অপচয় হচ্ছে মুদ্রারও। এক্ষেত্রে একেবারে স্ক্র্যাপ না করে, ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আলাদা করে বিক্রি করা হলে সরকার ভালো রাজস্ব পেতো বলে মনে করেন তারা।

নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ফেরদৌস আলম বলেন, 'নিলাম শাখা যখন বন্দরের ভেতরে ছিল তখন নিলাম কর্তৃপক্ষ ১৮ থেকে ২০টি গাড়ি নিলাম করে বিক্রি করেছে। আমরা ওখানে গাড়ি কেটে পার্টসগুলো আলাদা করে নিয়ে গিয়েছি।'

কর্তৃপক্ষ বলছে, ধ্বংস করা গাড়িগুলো ১৫ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩০ বছরের পুরানো। এর মধ্যে অনেক গাড়ি এসেছে আমদানি নীতি লঙ্ঘন করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছাড়পত্র না দেয়ায় এসব গাড়ি নিলামে বিক্রি সম্ভব হয়নি। এছাড়া কোনো কোনো গাড়ি নিলামে দর কম পড়াসহ নানা জটিলতায় বিক্রিও সম্ভব হয়নি।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, 'আমদানিকারক তার পণ্য খালাস করেনি। আবার যেগুলো বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আটক করে আমাদের কাছে দিয়েছে সেগুলো কেউ আর ক্লেইম করেনি। এগুলো তো নিলামে গিয়েছে। নিলামে কাভার হয়নি দেখেই গাড়িগুলো এই পর্যায়ে চলে এসেছে।'

মামলা থাকায় এমন আরও ৬১টি গাড়ি নিলাম শেডে ধ্বংসের অপেক্ষায় পড়ে আছে। তাই রাজস্ব ক্ষতি এড়াতে গাড়িসহ খালাস না হওয়া যেকোনো পণ্যের মামলা দ্রুত শেষ করে নিলাম করার দাবি বিডারদের।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর