বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এখন ১২ মাস মিলবে জাতীয় ফল কাঁঠাল। মনমাতানো স্বাদ ও ঘ্রাণের আঠাবিহীন বারি-৬ জাতের কাঁঠালের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে।
গ্রীষ্মকালীন এ ফলটির উৎপাদন ভালো হলেও মান ও প্রকৃতির কারণে বিশ্ববাজারে চাহিদা কম। তবে এখন শুধু গ্রীষ্মকাল নয় ১২ মাসই কাঁঠাল পাওয়া যাবে।
নাটোরের ফল চাষী সেলিম রেজার বাগানে শীতকালেও শোভা পাচ্ছে কাঁঠাল। ২০১৭ সালে থাইল্যান্ড থেকে আঠাবিহীন কাঁঠালের চারটি নতুন জাতের চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর সদর উপজেলার আহম্মদপুরে তার নিজের বাগানে রোপণ করেন। মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে ফল ধরে গাছগুলোতে।
বাগান মালিক সেলিম রেজা বলেন, 'এটির সম্ভাবনা অনেক। এই গাছের রোগবালাই নেই, তেমন কোন পরিচর্যাও লাগে না।'
দেশি কাঁঠালের মতো গায়ে তেমন কাটা নেই। হাতে কোনো আঠাও লাগে না। সে সাথে মনমাতানো ঘ্রাণের পাশাপাশি খেতেও সুস্বাদু। পাকা অবস্থায় এর স্বাদ আরও আকৃষ্ট করে। তবে কাঁচা অবস্থায় তরকারিতেও এই কাঁঠালের স্বাদ বেশ।
পাকা কাঁঠাল। ছবি: এখন টিবি
স্থানীয়রা বলেন, ‘১২ মাসই এই গাছে কাঁঠাল থাকে। বেশ লাভজনক ফল, আর কাঁচা কাঠালও রান্না করে খাওয়া যায়।’
দেশে এক সময় লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে দেশি কাঁঠাল চাষ হতো। কিন্তু আঠা থাকাসহ নানা কারণে ভোক্তার চাহিদায় কমতে থাকে এই ফলটির। বর্তমানে সারাদেশে ৬২ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়, যা থেকে বছরে উৎপাদন হচ্ছে ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৩০৩ টন।
তবে প্রতিবছর দেশ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টন দেশি জাতের কাঁঠাল জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদা থাকায় বারি-৬ জাতের মিষ্টি ফলটির রপ্তানির পাশাপাশি বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। এজন্য দেশের ৭৬টি হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে জাতটি সম্প্রসারণে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে হর্টিকালচার সেন্টার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (হর্টিকালচার উইং) পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা করে বারি কাঁঠাল-৬ নামে এর ছাড়পত্র দিয়েছে।’
বর্তমানে কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। তবে দেশে বছরে যে পরিমাণ কাঁঠাল উৎপাদন হয়, তার প্রায় অর্ধেক নষ্ট হয়ে যায়। এতে বছরে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৫শ' কোটি টাকা।