আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

রপ্তানি প্রণোদনা কমায় বাজার হারানোর শঙ্কা

চামড়া, কৃষি ও আসবাব পণ্যের রপ্তানি কমেছে

রপ্তানি প্রণোদনা কমায় বৈশ্বিক বাজার হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন চামড়া, কৃষি, মৎস্য ও আসবাব পণ্য রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরা। বিশ্ব মন্দা ও ডলার সংকটসহ নানা কারণে গেল দুই বছরে এসব পণ্য রপ্তানি ক্রমশ কমছে।

বিশ্ব বাজারে চাহিদা কমায় ও কমপ্লায়েন্স সংকটে এমনিতেই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫২৩ মিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অথচ তার আগের বছর একই সময়ে হয়েছিল ৬৩৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি।

প্রণোদনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করায় দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ট্যানারি মালিক ও রপ্তানিকারকরা। উদ্যোক্তারা বলছেন, গুটি কয়েক ট্যানারির উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি থাকলেও অধিকাংশের ফিনিশড লেদার তৈরির সক্ষমতা নেই। মোট রপ্তানি হওয়া চামড়ার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই ক্রাস্ট লেদার। এক্ষেত্রে ফিনিশড লেদারে প্রণোদনা তিন শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হলেও ক্রাস্ট লেদার থেকে প্রণোদনা পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়েছে। যা এই শিল্পের জন্য একটি বড় ধাক্কা।

রিফ লেদারের পরিচালক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববাজারে কেমিক্যালের মূল্য বৃদ্ধি ও অর্ডার সংকটের সঙ্গে প্রণোদনা কমে যাওয়ায় টিকে থাকা কঠিন হবে।’

কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য রপ্তানি সাম্প্রতিক বছরে ক্রমশ কমছে। উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে পারছে না বাংলাদেশ। চার বছরে সবজি রপ্তানি ১০০ মিলিয়ন ডলার কমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬১ মিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে কৃষি পণ্য রপ্তানি আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বেড়ে ৫০৭ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ানোর আগে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যে নগদ সহায়তা ৫ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ করায় রপ্তানি আরও কমার শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

এক সময়ের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানি খাত ছিল হিমায়িত মাছ। গত অর্থবছরের ছয় মাসে ২৬৬ মিলিয়ন ডলারের মাছ রপ্তানি হলেও চলতি বছরের তা কমে ২১৫ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। বাড়তি দামের কারণে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি কমায় বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে সম্প্রতি উচ্চ ফলনশীল জাতের ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু করে উদ্যোক্তারা। তবে সেটি সফল হওয়ার আগে চিংড়িসহ সব ধরনের মাছ রপ্তানিতে প্রণোদনা এক থেকে ২ শতাংশ কমিয়ে দেয়ায় উৎপাদন ও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ নন প্যাকার ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুব রানা বলেন, ‘চিংড়ি ও সামুদ্রিক কিছু অপ্রচলিত মাছ রপ্তানি করা হয়। আগে এগুলোতে সাবসিডি ৫ শতাংশ ছিল কিন্তু এখন কমে গেছে।’

বিশ্বে আসবাবপত্রের বাজার ৬০০ বিলিয়ন ডলারের। বর্তমানে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতের সেভেন সিস্টার, নেপাল, ভুটানে বেশি আসবাবপত্র রপ্তানি করে। অষ্ট্রেলিয়া ও কানাডায় সীমিত পরিসরে আসবাবপত্র রপ্তানি আমেরিকায় রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করেছে। তবে ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর হওয়ায় উচ্চ শুল্ক ও ডলার সংকটে কমেছে রপ্তানি। এ অবস্থায় সম্ভাবনাময় এ খাতে প্রণোদনা কমেছে ৫ শতাংশ। তাই রপ্তানি বাড়াতে বন্ড সুবিধা চান আসবাবপত্র সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিকরা।

২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের কথা রয়েছে, সেক্ষেত্রে সব ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা প্রত্যাহার হবে পর্যায়ক্রমে।