আমদানি-রপ্তানি , শিল্প-কারখানা
অর্থনীতি
0

চা উৎপাদনে বাংলাদেশের রেকর্ড

হবিগঞ্জ

চা শিল্পের ইতিহাসে উৎপাদনে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। সেই সাথে কাটিয়ে উঠছে রপ্তানি খরা। শিল্পের এমন অগ্রযাত্রায়ও বঞ্চনার শেষ নেই চা শ্রমিকদের। ভূমি অধিকার ও শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাই এখন দাবি বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠীর।

বিদায়ী বছর দেশের ইতিহাসে রেকর্ড ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। ২০২৩ সালে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। এতেই বুঝা যায় নানা সংকটের মাঝেও সম্বৃদ্ধ হচ্ছে দেশের চা শিল্প।

দেশে চা বোর্ড নিবন্ধত বাগান ১৬৮টি। এরমধ্যে মৌলভীবাজারে সর্বোচ্চ ৯০টি, হবিগঞ্জে ২৫টি, সিলেট ১৯টি এবং চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে ২২টি বাগান। এছাড়া রাঙামাটিতে ২টি, পঞ্চগড়ে ৮টি এবং ঠাকুরগাঁও ও বান্দরবানে একটি করে বাগান রয়েছে।

প্রাচীন এ শ্রমঘন শিল্পে দেশে বর্তমানে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে চা শ্রমিক সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। যাদের হাত ধরেই উন্নতির চরম শিখরে এই শিল্প। তবে মাত্র ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকদের অনেকরই নুন-আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। শিক্ষা-চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকারগুলো এখনও শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি বাগানগুলোতে।

নানা সংকট আর সুবিধাবঞ্চিত অবস্থাতেই দিন কাটে এখানকার সিংহভাগ মানুষের। এমনকি পাতা উত্তোলনের কাজে বাগান থেকে যেটুকু সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা, সেটিও মেলে না শ্রমিকদের ভাগ্যে।

একজন চা শ্রমিক বলেন, 'আমাদের মনে অনকে আশা, কিন্তু ১৭০ টাকা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারি না। আমাদের মজুরিটা বেশি করা দরকার। সর্বনিম্ন যদি ৩৬০০ টাকা দেয়া না হয় তাহলে আমাদের চলা সম্ভব না।'

তিন পুরুষের শ্রমিক জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে চায় বাগানের নতুন প্রজন্ম। শিক্ষায় মনোযোগী হচ্ছে চা শ্রমিক সন্তানরা। তবে বাগানের শিক্ষিত যুবকদের গল্পও সুখকর নয়। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা রনি গোয়ালা ও শিশির রায় জানায় চাকরি না পাওয়ায় অনেকটা হতাশ তারা।

রনি বলেন, 'চা বাগানের চা জনগোষ্ঠীকে যদি একটা কোটার মাধ্যমে সহযোগিতা করা যেত। শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে না বিভিন্ন জায়গায় যদি কোটার ব্যবস্থা করে দেয়া হয় তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চা জনগোষ্ঠীও ভালো একটা অবদান রাখতে পারবে।'

শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, মৌলিক অধিকার থেকে অনেকটা বঞ্চিত চা শ্রমিকরা। ভূমি অধিকারের দাবি বাস্তবায়ন হয়নি দীর্ঘদিনেও। শ্রমিক এবং মালিক পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও, নেই কার্যকর।

বাংলাদেশ চা জনগোষ্ঠি ছাত্র যুবক পরিষদের উজ্জল কুমার দাশ বলেন, 'পরের জায়গা, পরের জমিন ঘর বানায়া আমরা রই। চা শ্রমিকের আসলে কোনো ভূমি নেই। চা বাগানের জায়গাগুলো ডিসি পর্যায়ের জায়গা, আর ভূমির দাবি আমাদের চা শ্রমিকের প্রাণের দাবি। '

প্রাচীন এই শ্রমঘন শিল্পে সারাদেশে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে বর্তমানে মোট চা শ্রমিক ৮ লাখের বেশি।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর