বছরজুড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টন খেজুর বিক্রি হলেও শুধুমাত্র রমজান মাসে চাহিদা থাকে ৫০ হাজার টন। তবে উচ্চ শুল্কের কারণে দাম বেড়ে যাওয়ায় খেজুর বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। ব্যবসায়ীরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।
পাইকারি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'বাজারের যে পরিস্থিতি আর দামের যেই অবস্থা খেজুর এখন চলতেছে না। খুবই কম মানুষ খেজুর কিনছে।'
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পরিসংখ্যান বলছে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি প্রায় ৬০ শতাংশ কমেছে। আগের বছর একই সময়ে প্রায় ৩১ হাজার টন খেজুর আমদানি হলেও এবার মাত্র ১২ হাজার টন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন বর্তমানে কম দামের ইরাকি জাহেদী খেজুরেই প্রতি কনটেইনারে সব মিলিয়ে ৪২ লাখ টাকা শুল্ক গুণতে হচ্ছে। আর ভালো মানের খেজুর আমদানিতে কনটেইনার প্রতি শুল্ক হচ্ছে ৬৩ থেকে ৭০ লাখ টাকা। এতে খেজুর এখন নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।
আজমিরী ফার্ম অ্যান্ড ড্রাই ফ্রুটসের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন আরিফ বলেন, 'এতো টাকা কর দিয়ে তো কেউ আনতে চাইবে না। এজন্য বাজারে খেজুরের সংকট অবশ্যই থাকবে। গত বছর যে খেজুরগুলো ছিল ওইগুলোই আমরা এখন বিক্রি করতেছি।'
সরকারের শুল্ক কমানোর আশ্বাসে দুবাই, ইরাক ও সৌদি আরব থেকে অনেকে খেজুর আমদানির জন্য বুকিং দিয়েছেন। কেউ কেউ আগেভাগে আমদানি করলেও শুল্ক কমার অপেক্ষায় বন্দরে ফেলে রেখেছেন। শুল্ক কমলে খেজুরের দামও কমে আসবে বলে আশা বিক্রেতাদের।
বাংলাদেশ ফলমূল আমদানিকারক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ কামাল বলেন, 'আমরা দুবাই আর ইরাকে বুকিং করে রাখছি। যদি সরকার শুল্ক কমায় তাহলে পর্যাপ্ত খেজুর আনার সুযোগ আছে। সরকার যত দ্রুত কমাবে আমাদের জন্য তত মঙ্গল হবে এবং ভোক্তাদের জন্যও খুব উপকার হবে। নয়তো খেজুর অনেক কম আসবে।'
এদিকে, বাড়তি দামের কারণে চাহিদা কমায় বিদেশি ফলের বিক্রি কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। দাম কিছুটা কমলেও এখনো ২২০ টাকার নিচে কোন ফল মিলছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের উচ্চমূল্য এবং বিলাসী পণ্যের তালিকাভুক্ত করে ফল আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে সরকার। এ কারণে দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, 'এক কেজি আপেলে সরকার কর ট্যাক্স নেয় ৯০ টাকা। ৬ মাস আগে থেকে ৪০ শতাংশ বেচাকেনা কমে গেছে। আমরা ক্রেতার চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। এখন সরকার যদি শুল্কটা কমিয়ে দেয় তাহলে সরবরাহ বাড়বে।'
রমজানে মাল্টা, কমলা, আপেল ও আঙুরের চাহিদা বেশি থাকে। আঙুর ভারত থেকে, বেশিরভাগ আপেল সাউথ আফ্রিকা এবং মাল্টা মিশর থেকে আমদানি হয়। লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের হামলায় জাহাজের গতিপথ বদলের কারণে জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি এবং উচ্চ শুল্কের কারণে রোজায় অধিকাংশ বিদেশি ফলের দাম চড়া থাকতে পারে বলে শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
বাংলাদেশ ফলমূল আমদানিকারক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক তোহিদ উল আলম বলেন, 'আসলে ফলের দাম বাড়েনি। ডলারের দাম আর কর বেড়েছে। জাহাজ ভাড়াগুলো প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার ডলার বেড়ে গেছে। দামটা এই জন্য বেশি থাকবে, কমার কোন সম্ভাবনা নাই।'
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্যমতে গেল বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ফল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টন। আর গেল বছরে এই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার টন।