ই-কমার্স
অর্থনীতি

৬০ হাজার কোটি টাকার ই-কমার্স বাজার, কতটা সন্তুষ্ট গ্রাহক?

এক ক্লিকেই অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে যে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে তার মান নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট গ্রাহক? অর্ডার করছেন এক পণ্য মিলছে আরেক পণ্য। একই পণ্যে সয়লাব এখন অনলাইন দুনিয়া ফলে ৬০ হাজার কোটি টাকার ই-কমার্স বাজারের অনলাইন ব্যবসায়ীরাও আছেন বিপাকে। অনলাইন সেক্টরকে শৃঙ্খলায় আনতে তাই বিজনেস আইডির পরিকল্পনা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের৷

পজিটিভ রিভিউ আর লাখো লাইকের পেইজ দেখে জার্সি আর ট্রিমার অর্ডার দেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কৌশিক। কিন্তু হতাশ হন যখন সেই পণ্য হাতে পান। কারণ পেইজের ছবির বর্ণনার মিল নেই তার।

তিনি বলেন, 'কিছুদিন আগে একটা ট্রিমার কিনেছিলাম কিন্তু তাদের তথ্য মতে পণ্যটি হাতে পাওয়ার পর দেখলাম এইটা আসল না এবং মাস্টার কপিও না।'

বিদেশি ব্র্যান্ডের লিপস্টিক বলে এডভান্স পেমেন্ট নিয়ে নন ব্র্যান্ডের পণ্য ডেলিভারি পেয়ে দশ হাজার টাকা খুইয়িছেন আরেক ভুক্তভোগী দিনা।

তিনি বলেন, 'আসলে এইটা চকবাজারের পণ্য দিয়েছিল আমারে। আমি ব্যবহারও করতে পারি নাই। তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাদের কোনো রেসপন্স পাইনি।'

বর্তমান বিশ্বে খুচরা কেনাকাটার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ হয় অনলাইনের মাধ্যমে। বাংলাদেশেও করোনাকালে জনপ্রিয়তা পায় এমন কেনাকাটা। তবে এক ক্লিকে হাতের কাছে সব চলে আসলেও পণ্যের মান যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ না থাকায় বাড়ছে প্রতারণা।

শুরুটা অনলাইনে হলেও পরবর্তীতে শো রুম দিয়েছেন এমন উদ্যোক্তার সংখ্যাও কম নয়। এদের অনেকেই চেষ্টা করছেন নিজস্বতা বজায় রেখে ভিন্ন আঙ্গিকের ডিজাইন নিয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে। কিন্তু সেসব ডিজাইন চুরি বা হুবহু নকল করার প্রবণতাও বাড়ছে। এ কারণে চ্যালেঞ্জে পড়ছেন অনেক উদ্যোক্তা। পাল্টাতে হচ্ছে কাজের ধরণ।

ঈহা স্বতাধিকারী মৌরি নাজনীন বলেন, 'ডিজাইন এত পরিমাণে চুরি হয়। আমরা যার ছোট ব্যবসায়ী তাদের সব ডিজাইনের উপর ট্রেডমার্ক করা সম্ভব না।'

দেশে ই-ক্যাব থেকে নিবন্ধনকৃত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার কিন্তু নিবন্ধন ছাড়া বর্তমানে ফেসবুক ভিত্তিক বিজনেস পেইজ আছে ৬ লাখের বেশি। দেশে বর্তমানে ই-কমার্সের বাজার ৬০ হাজার কোটি টাকা। সম্ভাবনাময় বৃহৎ এই সেক্টরটিকে ভুয়া আর অসৎ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা করতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দরকার বলে মনে করছে ই-ক্যাব।

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, 'অনেক উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পাইকারদের জন্য। কারণ পাইকাররা সিঙ্গেল সিঙ্গেল পণ্যও পাইকারিতে বিক্রি করছে। এই জায়গাগুলোতে একটা নীতিমালা থাকা দরকার। কিভাবে পাইকারি বিক্রেতার ব্যবসা করবে আর নারী উদ্যোক্তারা ব্যবসা করবে।'

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণার অভিযোগের পরিমাণ বাড়ছে দ্বিগুণহারে। যার বেশিরভাগ অভিযোগের নিষ্পত্তি সম্ভব হচ্ছে না শুধুমাত্র ফেসবুক পেইজের অস্তিত্ব আর ঠিকানা না থাকায়। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে প্রতারকরা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ.এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'লক্ষ লক্ষ ই-কর্মাসের সাইট রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন রকম চটকদার পণ্যের বিজ্ঞাপণ দেয়া হয়। বিজ্ঞাপণে যে পণ্য দেখানো হয় তা দেয়া হয় না। যখন কোনো ভোক্তা অভিযোগ করে বা আমাদের দৃষ্টিতে আসে তখন প্রতিটা কেস আমরা এককভাবে দেখার চেষ্টা করি এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করি।'

তবে এই সেক্টরকে শৃঙ্খলায় আনতে অনলাইন ব্যবসায়ীয়ের সনাক্তকরণে বিজনেস আইডির ব্যবস্থা করছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।

অনলাইন প্রতারণা থেকে সুরক্ষিত থাকতে সচেতনতার বিকল্প নেই, তাই চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ক্রেতাদের ফাঁদে পা না দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর