ব্যাংকপাড়া
অর্থনীতি
0

অর্থপাচারকারীদের আর কোনো প্রশ্রয় দেয়া যাবে না: বিএবি চেয়ারম্যান

ব্যাংক খাতের সংস্কার ও পুনর্গঠনে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। আজ (বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএবির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার জানান, অর্থপাচারকারীদের আর কোন প্রশ্রয় দেয়া যাবে না, তারা যেন ফিরতে না পারে সে ব্যবস্থাও নেয়া হবে। এদিকে আজ কাজে যোগ দিয়ে এফবিসিসিআই নতুন প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের পাশাপাশি সংগঠনের সংস্কারও করবেন তিনি।

আওয়ামী সরকারের গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাত থেকে আত্মসাৎ হয়েছে ৯২ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর খেলাপি ঋণ ছাড়িয়েছে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা। আর ব্যাংকের অনাদায় অর্থের পরিমাণ ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া রয়েছে একের পর এক অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা। ফলে এখন গ্রাহকের টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বেশিরভাগ ব্যাংক।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দখল মুক্ত হতে শুরু করে ব্যাংকিং খাত। একে একে এস আলম, সালমান এফ রহমান, নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং আওয়ামী সরকারের দখলে থাকা ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই সাথে তারল্য সংকট কাটিয়ে পুরানো মালিকদের কাছে ব্যাংক ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন নয়া গভর্নর।

সংগঠনের নামেও অর্থ আত্মসাৎ করেছে অনেকে। এরমধ্যে শীর্ষে আছে এক্সিম ব্যাংকের এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। অভিযোগ রয়েছে গত ১৫ বছরে বিভিন্ন ধরনের আয়োজনের নামে ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন তিনি।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের দুদিন আগে দেশ থেকে পালিয়ে যান নজরুল ইসলাম। পরে ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকারকে সংগঠনটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করে সদস্যরা।

নতুন এই চেয়ারম্যান জানান ব্যাংক খাতের সংস্কার ও পুনর্গঠনে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজে সব ধরনের সহযোগিত করবে। সেই সাথে ব্যাংক খাতের যথাযথ সংস্কারে গভর্নর আশ্বাস দিয়েছেন। আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সাথে বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি।

বিএবির চেয়ারম্যান জানান যারা অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের ক্ষতি করেছে,অর্থ পাচার করেছে তাদের আর প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। তারা যেন আর ফিরে আসতে না পারে সে ধরনের ব্যবস্থাও নিতে হবে।

আব্দুল হাই সরকার বলেন, 'সরকার পরিবর্তন হওয়াতে আমাদের ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এখন যদি আবার এইসবকে প্রশয় দেই তাহলে আমাদের দেশটায় ধ্বংস হয়ে যাবে।'

ব্যাংক খাত সংস্কারে টাস্ক ফোর্সকে ব্যাংকগুলোরের সাথে আলোচনা করে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, 'যেহেতু আমাদের বড় পরিবর্তন হয়েছে সেখানে আমাদের সব সেক্টরই ক্ষতিগ্রস্থ। গর্ভনরের কথা মতো কাজ করবো এইটাও আমরা তাকে বলে এসেছি।'

এদিকে আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে গাঁ ঢাকা দেয় দেশের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা। এরপর তাদের অব্যাহতি দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ ও সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানায় অন্যান্য সদস্যরা। এজন্য চার মাসের জন্য নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআইয়ে যোগদান করেন প্রশাসক হাফিজুর রহমান। এসময় তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় সদস্যবৃন্দের একাংশ। পরে সবার সাথে মতবিনিময় করেন প্রশাসক।

প্রশাসক জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শুধু নির্বাচন নয় সেই সাথে কিছু সংস্কারও করবেন তিনি।

এফবিসিসিআই প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, 'আমি সকলের কাছে সহযোগিতা চাইবো যেন সামনে যে কয়দিন সময় পাই সংস্কারের তা করে আমরা ব্যবসায়ীদের এই বড় সংগঠনে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রতিনিধি দিতে পারি।'  

গত দেড় যুগের বেশি সময় ধরে যে দখলদারিত্ব আর লুটপাট চলেছে তা বড় ক্ষতি করেছে দেশের অর্থনীতিকে। এরমধ্যে ব্যাংক, মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান বিশ্লেষকেরা।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর