ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সঠিক পরিচালনা পরিষদ গঠনের পাশাপাশি স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে নিতে হবে সমাধানের উদ্যোগ।
ইসলামী ব্যাংকগুলোর আর্থিক জরুরী সংকট কাটাতে ও প্রতিদিনের নগদ লেনদেন টিকিয়ে রাখতেই যখন হিমশিম খাচ্ছিলো তখন বছর শেষ হওয়ার ঠিক দুদিন আগে ২২ হাজার কোটি টাকা এলওআর-এ ধার দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই অর্থের ৯০ শতাংশই নিয়েছিলো এসআলম নিয়ন্ত্রণাধীন ৬টি ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা আপৎকালীন সময়ের জন্য অর্থ রাখাতেও বছরধরে বিষম খাচ্ছিলো এসব ব্যাংক। এমন জরুরী অবস্থা কাটাতে গভর্ণরের একক ক্ষমতায় এই অর্থ দেয়া হয়।
যা দিয়ে ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখানো হয় লাভে আছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ছাপানো টাকায় ইনভেস্টমেন্ট ডিপোজিট রেশিও, লাভ, সম্পদ, সঞ্চয়, মূলধন, তারল্য দেখিয়ে এসব ব্যাংক থেকে দেয়া হয় ক্যাশ ডিভিডেন্টও। যেখানে কোন কোন সূচক ২০২২ সালকেও ছাড়িয়ে যায়।
এক আমানতকারী বলেন, ‘আমরা ব্যাংকের কাছে এমন কিছু আশা করি যে, শেষ বয়সে আমরা যেটা আমানত করেছি সেটা যেন আমরা ভালোভাবে পেতে পারি। কিন্তু এখন যা দেখছি আমাদের আমানতও হয়তো চলে যাবে।’
অথচ অবস্থা ফেরেনি। বরং ২০২৪ সালের জুনের শেষ দিন ইসলামী ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে আবারো ৩৫ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয় গভর্ণরের একক ক্ষমতায়।
তারল্য সংকটে আর দুর্নীতিতে ডুবে থাকা ব্যাংকগুলো এখন আমানতকারী আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এক অনিশ্চয়তার নাম এসব ব্যাংক। এস আলমের বেনামী কোম্পানিকে ঋণ দেয়া আর খেলাপী ঋণে জর্জরিত ব্যাংটিতে নিজের লোক বসিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের যোগসাজশে।
উচ্চ পর্যায়ের আতাতে নেয়া হয়নি কোন অনুসন্ধানের উদ্যোগ। কোন আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় নয় বরং চাপের মুখে মৌখিক নির্দেশে এসব অর্থ ছাড় দেয়া হতো বলে জানান ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।
ইসলামী ব্যাংক পিএলসির সিনিয়র প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা ড. শওকত আলী বলেন, ‘দেশে যেমন আয়না ঘর ছিল, ইসলামী ব্যাংকেও ঠিক এরকম আয়না ঘর ছিল। এখানে মেফতা আকিজ গংদের দাপটে আমরা মুখ খুলে কিছু বলতে পারিনি।’
ইসলামী ব্যাংক পিএলসির এসএমই বিভাগের সিনিয়র অফিসার সোহরাব হোসেন বলেন, ‘বড় বড় সিণ্ডিকেট ফাইন্যান্স বা করপোরেট লোনগুলো হয় সেগুলো মূলত উচ্চপর্যায় থেকে চাপ তৈরি করে ডেস্কে থাকা কর্মকর্তাদের বাধ্য করা হতো।’
তথ্য বলছে, ব্যাংক ব্যবসার আড়ালে অনেকটা বৈধ পথেই সিঙ্গাপুরে ১ বিলিয়নের বেশি ডলার সরানো হয়। সাইপ্রাস ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডেও অর্থ সরানো হয় বেনামে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ড. রেজাউল হক বলেন, ‘আমি ১৯৯৫ সালে এটা শুরু করি। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৯৬-৯৭ সালে এসে রিকগনাইজ করেন। ব্র্যাক এখন মাইক্রো ফাইন্যান্সের জনক। সেখানের ৩০০-৪০০ কর্মীকে আমি নিয়ে নেই। মূলত আমার মাইক্রো ফাইন্যান্সের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘মাইক্রো ফাইন্যান্সে আমি ২৫ লাখ পর্যন্ত অনুমোদন দিতাম। মাইক্রো ক্রেডিটে এর পরিমাণ ছিল ৫০ লাখ।’
আমানতকারী হিসেবে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো এখনো এসব ব্যাংকে শুধু আমানকারীরই নয় সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যাংকের চলতি হিসাব রয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো সুষ্ঠ ধারায় ফেরানো না গেলে প্রভাব পড়বে এসব বড় খাতেও।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ মামুন অর রশিদ বলেন, প্রথমেই দরকার একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদি ব্যাংকিং কমিশন করতেই হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির ব্যর্থতায়, কিংবা এইযে অনেক মন্দ ঋণ, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না, এগুলোতে ফরেনসিক প্রতিবেদন করতে হবে।’