সুমন হোসেন তিন বছর ধরে লেনদেন করছেন কিছুটা দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে। ব্যবসায়িক লেনদেনের পাশাপাশি রেখেছেন মেয়াদী আমানত। সেই সঙ্গে কিছু সঞ্চয়ও রয়েছে। সম্প্রতি ব্যাংকটি একীভূত হওয়ার খবরে ধীরে ধীরে জমানো টাকা তুলে নিচ্ছেন।
সুমনের মতো আরো অনেকেই ব্যাংক একত্রিত হওয়ার সিদ্ধান্তে পড়েছেন সংশয়ে। লেনদেন চালিয়ে যাবেন, নাকি অর্থ তুলে নেবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। কয়েক ধাপে ফেরত নিচ্ছেন অর্থ, আবার একই ব্যাংকে হিসাব থাকা পরিবার ও পরিচিতদের সঙ্গে করছেন আলোচনা।
সুমন হোসেন বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমি এই ব্যাংকে লেনদেন করছি। মাসে প্রায় আমার এক কোটি টাকার লেনদেন করতে হয়। কিন্ত ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্তে চিন্তিত হয়ে পড়ি। বলা যায়, দ্বিধায় পড়ে গেছি।’
দেশের ব্যাংকিং খাত পুনরুদ্ধারে চলতি বছরের শুরুতে ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে দশটি ব্যাংক একত্রিত হওয়ার কথা আলোচনায় এসেছে। ফলে কিছু ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে দেখা যাচ্ছে গ্রাহকদের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মোট আমানত প্রায় ১৭ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৪৩ শতাংশ বেশি।
এদিকে এখনও তারল্য সংকটে রয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেকর্ড ১৩.০৮ লাখ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৭ গুণ বেশি।
তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গত নভেম্বর শেষে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এছাড়া গত বছরের নভেম্বরে ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা, যা জুলাই থেকে ১ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা কম।
আর্থিক অবস্থা ভালো-খারাপ যেমনই হোক না কেন সব ব্যাংকেই বেড়েছে সুদহার। ভালো ব্যাংকগুলো ৯-১০ শতাংশ সুদহার দিলেও খারাপ অবস্থায় থাকা কিছু ব্যাংক দিচ্ছে ১২ শতাংশ পর্যন্ত। এতে একীভূত হওয়ার খবরে বেশি সুদেও দুর্বল ব্যাংকে গ্রাহক কমেছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ভাইস চেয়ারপারসন ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন, ‘একীভূতকরণের সিদ্ধান্তে মূলত দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকায় গ্রাহক টাকা তুলে নিচ্ছেন। সরকারি একটি ব্যাংক যখন বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে যখন মার্জ হতে যায়, তখন আমানতকারীদের মাঝে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিতে পারে।’
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘গ্রাহক অর্থ ফেরত নেয়ার ফলে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিলে সরকার থেকে সহায়তা বা সেগুলো অবসায়ন করতে হবে।
সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক যেটাই একীভূত হোক না কেন গ্রাহকের আমানত নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে অর্থ লোপাটকারীদের শাস্তির মাধ্যমে সামনে আনতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।