চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ মাসে তিন কনটেইনার চুরি, ক্ষতির মুখে বিডাররা

চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর | ছবি: সংগৃহীত
0

নিলামে বিক্রি করা ৪৮ লাখ টাকার ফেব্রিকসসহ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফের গায়েব আরেকটি কনটেইনার। এ নিয়ে গেল ৯ মাসে দুই কোটি টাকার কাপড়সহ নিলামের ৩টি কনটেনার চুরি হলেও হদিস মেলেনি একটিরও। বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আলাদা তদন্ত কমিটি করলেও কোন কূলকিনারা করতে না পারায় ক্ষতির মুখে বিডাররা। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, পণ্যের খোঁজ মিলবে কি-না সেটি চূড়ান্তভাবে জানাতে বন্দরকে একাধিক চিঠি দেয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন উত্তর না দেয়ায় বিডারদের অর্থ ফেরত দেয়া যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে শুল্ক কর মিলিয়ে ১ কোটি ৭ লাখ টাকায় ২৭ টন ডেনিম ফ্রেবিক্স কেনেন বিডার সেলিম রেজা। কিন্তু সে কনটেইনার বন্দর থেকে গায়েব হওয়ায় নয় মাসেও পণ্য বুঝে পাননি তিনি।

একইভাবে জুলাই মাসে বন্দরের জেআর ইয়ার্ড থেকে গায়েব হয় ৪২ লাখ টাকা মূল্যর কাপড়সহ আরেকটি কনটেইনার। সবশেষ গত ২২শে অক্টোবর ফারজানা ট্রেডিং নিলাম থেকে কেনা ৪৮ লাখ টাকা মূল্যের কাপড় ডেলিভারি নিতে গেলে জানানো হয় কনটেইনারটি নেই। সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের কাপড়সহ ৯ মাসে তিনটি কনটেইনার হারালেও হাদিস দিতে পারছেনা বন্দর। সবশেষ ৮০ লাখ টাকা মূল্যের আরেকটি কাপড়ের কনটেইনারের মূল্য পরিশোধের আগে খোঁজ নিতে গেলে বিডার জানতে পারেন সেটি ইয়ার্ডে নেই।

বিডারদের অভিযোগ, পণ্যের মূল্য ও শুল্ক করসহ পরিশোধিত অর্থ ফেরত পেতে কাস্টম হাউসে মাসের পর মাস ধর্না দিলেও কোন অগ্রগতি নেই। আর বন্দর পণ্যের রক্ষক হলেও নিখোঁজের দায় এড়াতে তদন্তের দোহাই দিয়ে কেবল সময়ক্ষেপণ করছে।

ভুক্তভোগী বিডার মো. ইয়াকুব বলেন, ‘আমরা তো মনে করি অবশ্যই কনটেইনার চুরি হয়ে গেছে। তাহলে অবশ্যই বন্দর সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ দায়ী। তারা তদন্ত করছে কিন্তু কতদিন পর এটার ফল পাবো এ বিষয়ে কিন্তু কোনো সুরাহা নেই।’

আরও পড়ুন:

ভুক্তভোগী বিডার সেলিম রেজা বলেন, ‘আমার যে কনটেইনারটা মিসিং এই মিসিং কনটেইনার আমাকে ডেলিভারি দিতে পারছে না এ বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের কোনো মাথাব্যথা আমি দেখছি না। যদি ১০ মাস আমার এ টাকাটা আটকে থাকে তাহলে আমার ব্যবসা তো বন্ধ।’

এ বিষয়ে চাপে থাকার কথা স্বীকার করে নিলাম শাখার এই কর্মকর্তা বলছেন, নিখোঁজ তিনটি কনটেইনারের সন্ধান মিলবে কিনা সেটি জানাতে বন্দরকে ১১টি চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে বন্দর চূড়ান্তভাবে কিছু না বলায় বিডারদের টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে দুই সংস্থা পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এখনো প্রতিবেদন দেয়নি।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার রাসেল আহমেদ বলেন, ‘হারানো কনটেইনার খুঁজতে তিনটি কমিটি কাজ করছে। একটি হচ্ছে বন্দরের অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠিত হয়েছে আরেকটি কাস্টমস হাউজ চট্টগ্রাম থেকে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। বন্দর যদি আমাদের লিখিত জানায় যে এ পণ্য ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হবে না তাহলে সে চিঠির প্রেক্ষিতে কিন্তু আমরা রিফান্ড প্রসেস শুরু করতে পারি।’

নিলাম আয়োজকরা বলছেন, যেকোনো পণ্য ডেলিভারি নিতে গেলে দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তার বিভিন্ন ধাপ পার করতে হয়। এরপরেও বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা থেকে মূল্যবান কাপড়সহ ৪০ ফিটের তিনটি কনটেইনার কিভাবে বের হলো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

কে এম করপোরেশনের ব্যবস্থাপক শাহেদ আলম বলেন, ‘এলিপিভিশনে কাজ করতে হয়, টার্মিনাল ভবনে কাজ করতে হয়, কনটেইনার কিপ ডাউনের জন্য সাইট পাওয়ারের সাথে কাজ করতে হয়। তিন থেকে চারটা স্টেপ পার হয়ে গাড়িটা বের হয়। এতগুলা স্টেপের মধ্যে কনটেইনার কিভাবে গায়েব হয় তা বোধগম্য নয়।’

এসব ঘটনায় তদন্ত চলছে জানালেও কোন বক্তব্য দেয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে নিলামে বিরূপ প্রভাব পড়ার কথা স্বীকার করেছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

ইএ