চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল স্থগিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা চার দিনেও কার্যকর হয়নি

চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর | ছবি: এখন টিভি
0

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত মাশুল আদায় স্থগিত রাখতে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা চার দিনেও কার্যকর হয়নি। ফলে বিভিন্ন সেবার বিপরীতে এখনও বাড়তি মাশুল দিতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আদেশের কপি হাতে না আসায় হাইকোর্টের আদেশ কার্যকর করা হয়নি। আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হতে পারে বলেও জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এদিকে, মাশুল বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে নৌ পরিবহন উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ।

মেরিটাইম ল সোসাইটির এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ৫২টি সেবার বিপরীতে বন্দর কর্তৃপক্ষের বর্ধিত মাশুল এক মাস স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সোমবার বন্দরের বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধনের সময় খোদ নৌ উপদেষ্টাও বলেছিলেন, এক মাস পর্যন্ত বর্ধিত মাশুল আদায় করা হবে না।

নৌ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ট্যারিফের ব্যাপারে কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। আমরা কোর্টের নির্দেশ মেনে একমাস বন্ধ রাখবো। তবে কোর্টকে আমরা এটা অবশ্যই বুঝানোর চেষ্টা করবো।’

তবে, বাস্তবতা হলো রিটের শুনানি শেষে গেল রোববার হাইকোর্ট এ নির্দেশনা দিলেও, চার দিনেও তা কার্যকর হয়নি। গড়ে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানো হলেও, কিছু সেবার ক্ষেত্রে তা আদায় করা হচ্ছে দুই থেকে চারগুণ পর্যন্ত। বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নেয়ার সময়ও বর্ধিত হারেই মাশুল আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানি-কারকদের।

চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘পণ্য খালাস করতে হলে সেই চারগুণ চার্জ বেশি দিয়েই আমাদের বিল করতে হচ্ছে এবং সেভাবে ছাড়াতে হচ্ছে। যাদের জরুরি কাঁচামাল আছে যা আরও বেশি ড্যামারেজ হচ্ছে তারা অনন্যোপায় হয়ে বেশি চার্জ দিয়ে পণ্য ছাড় করছে।’

আরও পড়ুন:

আমদানিকারক সরোয়ার আলম খান বলেন, ‘আমরা ৩৫৪০ টাকা দিতাম সেটা এখন ৫৬৬০ টাকা হয়ে গেছে। আর ২০ ফিট কন্টেইনারে আমরা আগে দিতাম ১৬১৭ টাকার মতো। সে জায়গায় এখন প্রায় ২২১১ টাকা। এগুলো আসলে অমানবিক।’

হাইকোর্টের নির্দেশনার পরেও বাড়তি ট্যারিফ আদায় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রিট দায়েরকারী আইনজীবী।

মেরিটাইম ল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী যদি কোনো ল’এর সার্টিফিকেট দিয়ে বলে যে এ অর্ডার পাস করা হয়েছে। তাহলে যাকে বলবে তাকে এ অর্ডার বিশ্বাস করতে হবে। বন্দরকে তো আমরা দিয়েছি এখন যদি তারা আইন না মানে তাহলে তো তারা আইন অমান্য করছে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে এমনিতেই উচ্চ হারে ট্যারিফ দিতে হচ্ছে। এর সঙ্গে বর্ধিত ট্যারিফ পণ্য আমদানি, রপ্তানি ও উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। ট্যারিফ নিয়ে উপদেষ্টার সাথে বন্দর ব্যবহারকারীদের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক বাতিল হওয়ায়, আবারো সভা ডেকে সবপক্ষের সাথে আলোচনা করে যৌক্তিক হারে ট্যাারিফ নির্ধারণের আহ্বান ব্যবসায়ীদের।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘গত ১৪ মাসে আমাদের এখানে প্রায় ৩৫৩টা ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং এ কর্মসংস্থান বেকারত্ব বাড়বে। আরও বেকারত্ব বাড়বে যদি বন্দর চার্জ বৃদ্ধি হয়। কারণ আমাদের খরচ বেড়ে গেলে বায়াররা আর এখানে আসবে না। এজন্য উনাকে বলছি এটা রিভিল করার জন্য।’

বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, হাইকোর্টের রায়ের কপি এখনো তাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। আদালতকে মাশুল বাড়ানোর বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করা হবে, এজন্য আপিলের সিদ্ধান্তও নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। এছাড়াও পুরানো রেটে মাশুল নিতে বন্দরের টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেমও আপডেট করতে হবে।

ইএ