দেশে অর্থনীতির নানা সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেও স্থবির গাড়ি-ফ্ল্যাট ও বিয়ের বাজার

গাড়ি-ফ্ল্যাট ও বিয়ে
গাড়ি-ফ্ল্যাট ও বিয়ে | ছবি: এখন টিভি
0

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশে অর্থনীতির নানা সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেও স্থবির গাড়ি-ফ্ল্যাট ও বিয়ের বাজার। ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে গাড়ি বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে, রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার প্রায় ক্রেতাশূন্য। আবাসন খাতে বিক্রি নেমে এসেছে আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। এদিকে, বিয়ের সংখ্যাও কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে অপেক্ষার মানসিকতা। ফলে থমকে গেছে অর্থ প্রবাহ।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ রাজনীতি বদলেছে, নেতৃত্ব বদলেছে, কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে দেশের অর্থনীতি এখন কোন পথে? গাড়ি, বাড়ি কিংবা বিয়ের বাজারে কী চলছে? জীবনযাত্রা ফিরছে কী পুরোনো গতিতে?

বেসরকারি তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে গাড়ি বিক্রির পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি ও তেজগাঁওয়ের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শোরুমগুলো এখন প্রায় ক্রেতা শূন্য। বিক্রেতারা বলছেন, বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ।

আরও পড়ুন:

গাড়ি বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘বর্তমানে মাসে ১টি গাড়ি বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছি।’

নতুন গাড়ির বাজারেও প্রায় একই চিত্র। দেশিয় উদ্যোক্তারা বলছেন, অনিশ্চিত বিনিয়োগ পরিস্থিতি আর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নতুন গাড়ি কেনার আগ্রহ কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কর বাড়ানোর ক্ষেত্রে খাত সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ নেয়া, সরকারকে উদ্যোক্তা বান্ধব ভূমিকা গ্রহণ করার আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা।

বাংলা কারসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাকির হোসেন বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ বাড়ছে। জিনিসপত্রের দাম কমবে, ডলারে দাম কমবে। এখন যেহেতু নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে তাই মানুষ একটু চিন্তায় আছে কোনদিকে যাবে বিষয়গুলো। আমরা যারা গাড়ি নির্মাতা আছি তাদের সঙ্গে কথা বলতো। ট্যাক্সটা বাড়ানোর তো কোনো কারণ দেখি না। ফেব্রুয়ারি ও মার্চের দিকে গাড়ির দাম অনেক বেড়ে যাবে।’

অন্যদিকে ফ্ল্যাটের বাজারের রিহ্যাবের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০-১১ সালে যেখানে বছরে গড়ে ১৫ হাজার ফ্ল্যাট বিক্রি হতো, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮-১০ হাজারে। অর্থনৈতিক মন্দা, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং ড্যাপের নতুন বিধিনিষেধে আবাসন খাতে ভর করেছে স্থবিরতা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও প্রতি নির্বাচনের ন্যায় এবছরও বাজার ভাটা যাবার শঙ্কা জানান তিনি।

রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রতি নির্বাচন বছরেই ব্যবসারয় মন্দা চলে শুধু এবছরই না। শুধু আমাদের রিয়েল স্টেট ব্যবসা না প্রত্যেক ব্যবসায় সিদ্ধান্ত নেই নির্বাচনের পরে।’

গাড়ি-বাড়ির পাশাপাশি থমকে গেছে বিয়ের বাজারও। কাজি অফিসগুলোর হিসাবে দেখা যাচ্ছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে বিয়ের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারে এখন এক ধরনের 'অপেক্ষার মানসিকতা' কাজ করছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে ব্যয় কমা অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে নির্বাচন সামনে রেখে অনেকে হাতে টাকা রেখেছেন, কিন্তু কোথাও বিনিয়োগ করছেন না।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশে সব থেকে বড় লেনদেনের পিছনে থাকে দুর্নীতি। সেক্ষেত্রে সরকার একটা রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। কারণে তাদের ডিমান্ড থাকা শর্তে এখন কেনাকাটা করছে না।’

গাড়ির চাকা, ফ্ল্যাটের ইট কিংবা বিবাহের মঙ্গল ঘণ্টা, সবকিছুই যেন এখন অপেক্ষায়।

সেজু