সারি সারি তালগাছ, ধানের গন্ধে মৌ-মৌপুরো গ্রাম। উঠোনের আধমরা গাছটায় বাধা দোলনায় আবদুল মান্নান ভাবছেন- গ্রামের বদলে যাওয়া অনেক রঙই এখন তার অচেনা। তবুও এ গাঁয়ের জীবন মানের উন্নতি তাকে আন্দোলিত করে এই ভেবে যে, দারিদ্র্যতার কষাঘাতে জর্জরিত মানুষগুলো আগের চেয়ে এখন ভালো আছে।
![](https://images.ekhon.tv/ABDUL MANNAN.webp)
গাছ তলায় দোলনায় বসা আব্দুল মান্নান
১৩ বছর আগে মারা যান আবদুল হালিমের স্ত্রী। শিক্ষকতার বেতনে টানাপোড়নের সংসারে মানুষ করেছেন সন্তানদের। দুই ছেলেসহ মেয়ের জামাই থাকেন প্রবাসে। নিঃসঙ্গতা কাটাতে দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকা বড় ছেলের সাথে বৃদ্ধ পিতার সরল আবদার মনে করিয়ে দেয় মানুষ বুড়ো হলে আবার যেন শিশু হয়ে যায়।
![](https://images.ekhon.tv/ABDUL HALIM.webp)
ছেলের সঙ্গে কথা বলছেন আব্দুল হালিম
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার এনায়েতপুরের একটা বড় অংশের মানুষ থাকেন দক্ষিণ কোরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। একযুগে বদলেছে পুরো গ্রামের চিত্র। দারিদ্র্যতাকে পিছে ফেলে এখন স্বাবলম্বী এসব পরিবার। বাজারে গড়ে উঠেছে কোরিয়ান ভাষা শিক্ষার ট্রেনিং সেন্টার। এছাড়া বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ফলে চাঙা এজেন্ট ব্যাংকগুলোও। তবে এ জনপদে অবৈধ হুন্ডিতে টাকা লেনদেনের দৌরাত্ম্যও বেপরোয়া।
![](https://images.ekhon.tv/SAGAR DIGHI.webp)
টাঙ্গাইলের সাগরদিঘীর পাশে দৃষ্টিনন্দন একটি বাড়ি
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার এ দিঘীটার নাম সাগরদিঘী। সময়ের সাথে দিঘীটি রূপ-জৌলুশ হারালেও রাস্তার পাশের দৃষ্টিনন্দন বাড়ি, আর খামার বলে দেয় কতটা উন্নত এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা। যার একটা বড় অবদান প্রবাসীদের রেমিট্যান্স। প্রবাসে থাকেন এই অঞ্চলের ৫ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ।
![](https://images.ekhon.tv/SHAMIM MIA.webp)
নিজ পরিবারসহ ময়মনসিংহের শামীম মিয়া
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার সুহিলা গ্রামের শামীম মিয়া, ৪ লাখ টাকা খরচ করে ভাগ্যবদলের আশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন ওমানে। গ্রাম্য দালালের কাছে প্রতারিত হয়ে ১১ মাসেই ফেরত আসতে হয় তাকে। জমিজমা হারিয়ে এখন দেনার দায়ে সর্বস্বান্ত এই পরিবারটি। সরকারের কাছে চান সহায়তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দক্ষিণ কোরিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর কোটা পূরণ হয়েছে গড়ে মাত্র ১৫ শতাংশ। বাকি কোটা পূরণেও রয়েছে সংশয়।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন ব্যয়ের কারণে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষরা। এজন্য দালাল ও এজেন্সিগুলোর প্রতারণা রোধে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ তাদের। আর বিদেশ থেকে কেউ প্রতারিত হয়ে আসলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের।
ময়মনসিংহ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক অমিত সরকার বলেন, ‘বিদেশ থেকে প্রতারিত হয়ে আসা ব্যক্তি চাইলে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে অভিযোগ করতে পারবেন। এছাড়া ঢাকায় বিএমইটি কার্যালয়েও অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।’
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘আমরা যদি সকল শ্রেণির মানুষকে বিদেশে পাঠাতে চাই অর্থাৎ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন করতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদের অভিবাসন ব্যয় কমাতে হবে। একটা ন্যূনতম ব্যয় নির্ধারণ করে দিতে হবে এবং শুধু সেটা নির্ধারণ করে দিলে হবে না সঙ্গে শক্তিশালী মনিটরিং করতে হবে।’
২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে কাজের উদ্দেশ্যে গিয়েছে ১৩ লাখ মানুষ। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। এছাড়া মালেয়শিয়া, রোমানিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও কাজ করছেন অনেকে।