অর্থনীতি
0

কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব কেন আসছে না, খতিয়ে দেখবে এনবিআরের পর্যালোচনা কমিটি

কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব কেন আসছে না, তা খতিয়ে দেখবে এনবিআরের পর্যালোচনা কমিটি। পর্যালোচনা করা হবে আওয়ামী লীগের শাসনামলে নেয়া রাজস্ব সংক্রান্ত সকল পদক্ষেপ। ব্যবসায়ীসহ প্রয়োজনে সব বিভাগের সঙ্গে আলোচনায় বসে বের করা হবে দুর্বলতা। কাজ করবে নীতিমালা নিয়ে। সংস্কার হবে এনবিআরের অভ্যন্তরেও।

রাজস্ব আহরণ করে এনবিআর, অর্থবছরে তা ব্যয় করে থাকে সরকার। তবে আয়ের সীমাবদ্ধতা জেনেও ঋণ করে ব্যয় বাড়ানোর অভ্যেস গড়ে উঠেছে গত ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনে। প্রশ্ন উঠেছে, আহরণ করা রাজস্বের সঠিক ব্যবহার নিয়েও।

কর আহরণে আইনি মারপ্যাচের অপব্যবহার, নীতিমালার অস্পষ্টতা, কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা ও অসততা, এনবিআরের সক্ষমতা, ক্ষমতাসীনদের ছাড় দেয়ার প্রবণতাসহ নানা প্রশ্ন পিছু ছাড়েনি রাজস্ব বোর্ডকে। বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেয়ার পরেও করদাতাদের অস্বস্তির কারণ থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি সংস্থাটি।

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর সংস্কার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকারের নজর এবার এনবিআরের দিকে। পর্যালোচনা হবে গত পনেরো বছরে সংস্থাটির কার্যক্রম। সাজানো হবে নতুন করে।

এ সংস্কারে পরামর্শ সহায়তা দিতে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। ৫ সদস্যের কমিটিতে আছেন সাবেক দুই চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ, ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ, কর বিভাগের সাবেক সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন, আমিনুর রহমান ও শুল্ক বিভাগের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন।

রাজস্ব নীতি, এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার মূল্যায়ন ও আধুনিকায়ন। শুদ্ধাচার ও সুশাসনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও নীতিমালা প্রণয়ন। নাগরিক যোগাযোগ ও অংশীজন সম্পৃক্ততার কার্যক্রম। রাজস্ব সংস্কার সংশ্লিষ্ট যেকোনো নীতিগত পরামর্শ দেবে এই কমিটি। এনবিআরের প্রশাসনিক সংস্কারের প্রয়োজন হলেও সরকারকে জানাবেন তারা।

রাজস্ব খাতের যেকোনো সমস্যার সমাধান বের করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা মহলের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিটি। ব্যাংক বা আর্থিক খাতসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের কাছে চাওয়া হবে তথ্য। তবে কমিটির সদস্যরা বলছেন, তারা পরামর্শ দিলেও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত সরকারের।

এনবিআরের সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, ‘করদাতাদের দিক থেকে অভিযোগ দুইটা। একটা হয়রানি স্বচ্ছতার অভাব। এছাড়া জটিল পদ্ধতি। অন্যদিকে এনবিআরের কর্মকর্তাদের অভিযোগ করদাতারা মিথ্যা কথা বলে আর কর ফাঁকি দেয়।

এনবিআরের কার্যক্রমে অসন্তোষ থাকলেও রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাকেও অস্বীকার করছেন না ব্যবসায়ীরা। তাই, আলোচনার সুযোগকে হাতছাড়া করতে চান না তারা।

বিসিসিসিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা বলেন, ট্যাক্স ও ভ্যাটের ক্যালকুলেশনের জন্য যে প্রেসক্রিপশন দেয়া থাকে তা সহজ। তবে আমরা ট্যাক্স ও ভ্যাট সাবমিট করতে যায় তখন হাজারো ভোগান্তি দেখা যায়।

তবে, সংস্কার সফল ও টেকসই করতে শুধু পরামর্শক কমিটি নয় বরং সমস্ত অংশীদারদের অংশগ্রহণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কমিটি গঠনের প্রয়োজন বলে মত খাত সংশ্লিষ্টদের।

এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. আব্দুল কাফী বলেন, ‘যদি এখানে সংস্কার ঠিকমতো করতে হয় তাহলে এখানে স্টেক হোল্ডারদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।’

এদিকে আয়কর আইন পর্যালোচনায়ও একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সাত সদস্যবিশিষ্ট এই টাস্কফোর্স পুরো আয়কর আইন পর্যালোচনা ও প্রজ্ঞাপনগুলোর খুঁটিনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।

এছাড়া রাজস্ব আদায়ে নতুন আইনের প্রভাবও বিশ্লেষণ করবেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন খাতে যে কর ছাড় দেয়া হয়েছে, এসব কর ছাড়ের প্রভাব ও যৌক্তিকতা নিয়েও কাজ করবে টাস্কফোর্স।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর