অর্থনীতি
0

অর্থনীতি সংস্কারের সমস্যা ও সমাধানের বিষয় অন্তর্বর্তী সরকারকে জানাবে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি

অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আনার অনুশীলন হচ্ছে শ্বেতপত্র। দেশের অর্থনীতি সংস্কারের সমস্যা ও সমাধানের বিষয়গুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তুলে ধরতে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। আজ (বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট) কমিটির প্রথম সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি দুর্নীতি ধরার জন্য না। তবে দুর্নীতি কেন হয়েছে আর কী পরিমাণ হয়েছে, সে বিষয়ে কথা বলবে। সেই সাথে ভবিষ্যতে যাতে আর না হয় সে বিষয়ে পরামর্শ দেবে।’

এছাড়া কোনো খাতের সংস্কার করবে না এই পরামর্শক দল। তবে খাতগুলোতে এতদিন যে দুর্নীতি হয়েছে তার কারণ এবং ভবিষ্যতে কীভাবে সেটা বন্ধ করা যাবে- সে বিষয় তুলে ধরবে বলেও জানান তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সার্বিক বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং বা আর্থিক খাতের পূর্ণ মূল্যয়ন করা হবে না। ব্যাংকিং খাতে নাগরিকদের সঞ্চয় ঠিক রাখা, সুরক্ষা নিশ্চিতের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা এবং আগামী দিনে যাতে অযোগ্য লোককে লাইসেন্স না দেওয়া হয় সে বিষয়ে বলা হবে।’

সব প্রকল্প নিয়ে সম্ভব না হলেও মেগা সব প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। যেসব মেগা প্রকল্প আছে সেগুলো ব্যবহারে ভবিষ্যতের অবস্থা কি হতে পারে সে বিষয়ে মূল্যয়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এই অর্থনীতিবিদ জানান, দেশ থেকে যেসব টাকা পাচার হয়েছে সেগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আসা অনেক জটিল বিষয়। তবে সেগুলো পাওয়া না গেলেও যারা পাচার করেছে তাদের শাস্তি যাতে নিশ্চিত হয় সে বিষয়ে বলা হবে বলেও জানান শ্বেতপত্র প্রদান কমিটির প্রধান।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কি হবে সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে কোনো বিষয়ে যখন প্রতিবেদন তৈরি হবে তখন তিন মাস অপেক্ষা না করে তার আগেই দেয়া হবে। শুধু কমিটির কাজে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিষয় আসবে সেগুলো মূল্যয়ন করা হবে।’

এর আগে ২১ আগস্ট শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠনের জন্য দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে ঘোষণা দেয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

এরপর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুমোদন নিয়ে কমিটির সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করেন। বুধবার (২৮ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা করেছে।

কমিটির বাকি ১১ সদস্য হলেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক।

এছাড়া বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাজী ইকবাল।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম. তামিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী।

শ্বেতপত্রে ছয়টি ক্ষেত্রে আলোকপাত করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, সরকারি ব্যয় (সরকারি বিনিয়োগ, এডিপি, ভর্তুকি ও ঋণ), ঘাটতি বাজেট অর্থায়ন বিষয়াদি থাকবে।

এছাড়া মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকবে উৎপাদন, সরকারি কেনাকাটা ও খাদ্য বিতরণ, বাহ্যিক ভারসাম্যের মধ্যে থাকবে রফতানি, আমদানি, প্রবাসী আয়, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই), বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিদেশি অর্থায়নের প্রভাব ও ঋণ।

tech