অর্থনীতি
0

অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে কল্যাণমুখী সরকার গঠনের চ্যালেঞ্জ নতুন সরকারের সামনে

অগোছালো ও নড়বড়ে অবস্থায় আছে দেশের প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আর্থিক খাত। অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে একটি কল্যাণমুখী সরকার কাঠামোতে রূপান্তরের ভিত্তি স্থাপন করার চ্যালেঞ্জ এখন নতুন সরকারের সামনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাই কয়েক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়া ঠিক হবে না। পাশাপাশি আর্থিক সংকট নিরসনে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে রপ্তানি ও প্রবাসী খাতে।

ছাত্র জনতার আত্মত্যাগের পথ পাড়ি দিয়ে নতুন এক সকালের প্রত্যাশায় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) শুরু হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা। দ্রোহের আগুনে সে যাত্রায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা নির্ধারণ করেছেন, এক বিজ্ঞ-তরুণের মিশেলে হয়েছেন এক দল। দেশ গড়তে সব জঞ্জাল ভেঙে নিজেদের স্বপ্নের সমান উঁচু এখন প্রত্যাশার চোখ।

সেখানে যাকে প্রধান করা হয়েছে তিনি নিজগুণে শীর্ষবিন্দুতে। বৃহস্পতিবার শপথের পর হাসপাতালে আহতদের দেখতে যাওয়া, মানুষকে আশ্বস্ত করে দেয়া ভাষণ, স্মৃতিসৌধ শহীদ মিনার ঘুরে ক্যাবিনেটে দায়িত্ব বণ্টন সব কিছু যেনো গুছানো, সহজ একজন কর্মঠ তরুণের মতো উজ্জ্বল। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ জানান, ঠিক এমন উদ্যোম তিনি দেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার সময়ও তিনি (ড. ইউনূস) কাজ করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রকল্পের কাজও তিনি করতেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ইনভলভ করে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটা প্রকল্প করে দিয়েছেন। এটার কাজ দেখাশোনা করেন, উনি পড়ান, গ্রামে গিয়ে রাতের বেলা মনুষকে অরগানাইজড করেন। তার মতো দ্বিতীয় কোনো নেতা আমি দেখতে পারছি না যে, এই পর্যায়ে গিয়ে দেশের জন্য কিছু দিতে পারবে।'

তোফায়েল আহমেদ মনে করেন সংসদ, আইন, সংবিধান, প্রশাসনিক ব্যবস্থা সাজিয়ে মানুষের প্রত্যাশা ও দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত নিতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। সেখানে মেয়াদের ক্ষেত্রে যে ব্যত্যয় ঘটবে তা মেনে নিতে হবে মানুষ ও কল্যাণ রাষ্ট্রের স্বার্থে।

তিনি বলেন, 'যেহেতু এটা এক ধরনের বিপ্লব, অভ্যুত্থানে সরকারের একটা লিগেসি থাকে। এটা পাবলিক ম্যান্ডেট। সেটা ধরেই কিন্তু কাজ করতে হবে। এখানে তিন, চার বা ছয় মাসের বিষয়টি না ভেবে, এটাকে ভাবতে হবে যে এক বছরের একটা প্ল্যান দিন, এটা যতটুকু করতে পারেন, না হলে সময় বাড়িয়ে দিন।'

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, গতানুগতিক রাজনৈতিক চর্চা মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। আবারও তারা পুরোনো চেহারায় ফিরতে চায় না। ফলে নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর তাড়া থাকতে পারে, তবে দলগুলোকে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী তৈরি হতে হবে।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, 'এই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের বদলাতে হবে। রাষ্ট্রের সবকিছু তাদের ওপর থাকবে। কোনো ধরনের সাংবিধানিক স্বাধীনতা থাকবে না মানুষের, এগুলোর স্বাধীনতা না থাকলে তো হবে না। সে কারণেই নবীনরা বলছে রাষ্ট্র সংস্কার। এর মানে বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং সংসদ তিনটিই স্বাধীন থাকতে হবে। সেই জায়গায় শিক্ষা নিতে হবে আমাদের।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, 'আমরা এমন একটি সরকার যেন ভবিষ্যতে পেতে পারি, সেজন্য সব ধরনের সাংবিধানিক পরিবর্তন আনা যেন কেউ কর্তৃত্ববাদী সরকারে রূপান্তরিত হতে না পারে। যেকোনো ব্যক্তি যিনি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি দুইবারের বেশি থাকতে পারবেন না।'

অর্থনৈতিক দিক নিয়েও চ্যালেঞ্জ রেখে গেছে বিদায়ী সরকার। সেখানে সুষ্ঠু পরিস্থিতি ফেরাতে দেশে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। দেশের অভ্যন্তরে গুছিয়ে নেবার সাথে সাথে আনুষ্ঠানিক খাতে রেমিট্যান্স ফেরাতে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্যও নিতে হবে কল্যাণমুখী নীতি ও উদ্যোগ।

তাসনিম সিদ্দিকী আরও বলেন, 'অভিবাসী কর্মীদের যারা রেমিট্যান্স বন্ধ করে ছাত্র আন্দোলনকে সহযোগিতা করলো, তারা যেন তাদের অধিকার পায়। প্রতিটি জিনিসে তার অধিকার, তার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে একটা অভিবাসন দশক ঘোষণা করতে হবে। স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘমেয়াদে প্রচুর পদক্ষেপ এখানে দরকার। আমর বলছি ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স ২১ বিলিয়ন, এটা ৬০ বিলিয়ন হবে।'

শাসন ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, শিক্ষাকেন্দ্রে রাজনীতিমুক্ত সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাতে হবে। কল্যাণকর চর্চায় ফেরাতে হবে প্রতিটি সেবা কাঠামোকে। এনবিআর থেকে শুরু করে আর্থিক খাতের ক্ষতও নিরাময় করতে পরিবর্তন আনতে হবে নীতি চর্চায়। আর সেখানে ১৭ জনের সাথে ১৭ কোটি মানুষকেও এক হতে হবে।

tech

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর