রাজধানীর দুই সিটিতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। যার অর্ধেকের বেশি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ সালে ঢাকা উত্তর সিটিতেই বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২২ ভাগ।
বিপুল এই বর্জ্যের একটি বড় অংশ আসে রাজধানীর রেস্তোরাঁগুলো থেকে। উত্তর সিটির তথ্য বলছে, সংস্থাটি থেকে লাইসেন্স নেয়া রেস্তোরাঁর সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ১০৫টি। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে লাইসেন্স নেয়া রেস্তোরাঁর সংখ্যা ১ হাজার ৩১টি। এসব রেস্তোরাঁ থেকে নিয়মিত রাজস্ব পায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। অথচ রাজধানীতে মোট রেস্তোরাঁর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। বাকি লাইসেন্সবিহীন রেস্তোরাঁগুলো থেকে কোনো রাজস্ব পায় না কর্তৃপক্ষ। উল্টো এসব রেস্তোরাঁর বর্জ্য অপসারণ করতে হয় সিটি করপোরেশনকেই। যা তাদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে।
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘খাবারের দোকান হলো, ময়লা ফেললো। সেই ময়লা তো আমাদেরকে পরিষ্কার করতে হচ্ছে কিন্তু সে কোনো ট্যাক্স দিলো না। ট্যাক্স দেবে না অথচ ময়লা আমাদেরকে ফেলতে হবে, এটা তো হতে পারে না।'
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২১ সালে দেশের রেস্তোরাঁ খাত নিয়ে একটি জরিপ করে। জরিপে দেখা যায়, ২০২১ সালে দেশে মোট হোটেল ও রেস্তোরাঁ ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি। এক দশকের ব্যবধানে এই সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ শতাংশের বেশি। তবে অবাক করা তথ্য হচ্ছে, বর্তমানে রাজধানীতে যেসব রেস্তোরাঁ রয়েছে তার ৯৩ শতাংশই অবৈধ।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে, সামনেও থাকবে। অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেসব ভুল-ত্রুটি আছে সেগুলো যেন রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ দ্রুত নিরসন করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর অবৈধ রেস্তোরাঁগুলো সরকারি বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে চলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই নিয়মবহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা এসব রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে অভিযানে নামে প্রশাসন। আর এ কারণেই বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, ‘এখন তো অলি-গলিতে রেস্তোরাঁ হয়ে গেছে। তাদেরকে কীভাবে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করবো। আমরা চাই, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ছাড়পত্র ছাড়া কেউ যেন ব্যবসা করতে না পারে।’
তিনি আরও জানান, অবৈধ রেস্তোরাঁ মালিকদের আইনের আওতায় আনা উচিত। এছাড়া এসব রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে সরকারি সংস্থাগুলোকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন রেস্তোরাঁগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। শুধু তাই নয়, অনুমোদনহীন এসব রেস্তোরাঁ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রেস্তোরাঁগুলোকে নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।’