অর্থনীতি
0

লোকবল সংকটে ভুগছে দেশের একমাত্র রেল সেতু কারখানা

ছয় বছর পর চালু হলেও লোকবল সংকটে ভুগছে দেশের একমাত্র রেল সেতু কারখানা। ১০৪ জনের পরিবর্তে কাজ চলছে মাত্র ১৪ জন দিয়ে। আপাতত শুধু সিসি ক্রিব তৈরি করা হচ্ছে কারখানায়। চেষ্টা চলছে পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং তৈরির মেশিন চালুর। যা আমদানিতে বর্তমানে শতকোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে রেললাইনের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ২ হাজার ৮৫৮ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ৫০ বছরে সড়কপথের দৈর্ঘ্য কয়েকশ গুণ বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়েনি রেললাইন। বর্তমানে দেশে রেললাইন রয়েছে ২ হাজার ৯৫৫ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার।

দীর্ঘ এই রেলপথে আছে ৩ হাজার ৬৫০টি সেতু। এরমধ্যে বড় সেতু ৫৪৬টি এবং ছোট সেতু ৩ হাজার ১০৪টি। যা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবছর সরকারের ব্যয় শতকোটি টাকার বেশি। যার বেশিরভাগ মালামাল আমদানিনির্ভর।

অথচ ৩০ বছর আগেও সেতুর মালামাল আমদানিতে কোনো খরচ ছিল না। সৈয়দপুরে দেশের একমাত্র সেতু কারখানাতেই তৈরি হতো যাবতীয় মালামাল ও যন্ত্রাংশ। ১৯৯১ সালে রেলের ব্যয় সংকোচন নীতির কবলে পড়ে কমতে কমতে ২০১৪ সালে সাময়িক ও ২০১৮ সালে পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয় কারখানাটি।

ছয় বছর বন্ধ থাকার পর গতবছর চালু করা হয় এ রেল সেতু কারখানা। কিন্তু লোকবলের অভাবে পূর্ণশক্তি নিয়ে কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না কারখানাটির। গতবছর থেকে মাত্র ১০ জন নতুন খালাসী নিয়ে চলছে এটি।

শ্রমিকরা বলেন, 'এখানে সিসি ক্রিবের কাজ হয় আর পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং মেশিন ঠিকঠাক হয়েছে। এখন অতিশিগগিরই কাজ চালু হবে।'

আরেকজন বলেন, 'কারখানাটিকে অনেক ওপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা শতভাগ আত্মবিশ্বাসী। আমরা সম্পূর্ণ কাজ হাতে কলমে শিখে গেছি। অবসরপ্রাপ্ত ৪ জন কর্মচারীর কাছ থেকে এ কাজগুলো শিখেছি।'

মূলত ব্রডগেজ, মিটারগেজ, রেলপথের ব্রিজ এবং রেলপথের পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং ও গার্ডার ইয়ার্ড তৈরির জন্যই এ সেতু কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছিল। শুরুতে এ কারখানার কর্মকাণ্ড পরিচালনায় মেশিন শপ, পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং শপ ও গার্ডার ইয়ার্ড শপ নামে তিনটি উপ-কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করত। যেখানে তৈরি হত ব্রিজ গার্ডার, ফুটওভার ব্রিজের উপকরণসহ ১০০ ধরণের মালামাল।

পুরাতন একজন কর্মচারীরা বলেন, ‘আমাদের যে কারখানা ছিল সেখানে প্রায় ৪শ’-৫শ’ লোক কাজ করতো তিন শিফটে। রাত দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ চলতো।'

কারখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর ঘরে ব্লাকবোর্ডে চোখ পড়তেই হোঁচট খেতে হয়। মঞ্জুরি হওয়া লোকবলের সংখ্যা ১০৪ জন হলেও এখন কাজ করছে মাত্র ১৪ জন। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় ৬২টি মেশিনের প্রায় সবগুলোয় অকেজো। এরমধ্যে ১৮ থেকে ২০টি মেশিন মেরামত করতে পারলে দেশের সেতু সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ বানানো সম্ভব বলছেন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা।

সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানার স্টোর মুন্সী মো মুনজুর রহমান বলেন, 'ব্রিজগুলোতে সিসি ক্রিপ দিয়ে ট্রেন পারাপারের জন্য পজিশন তৈরি করা হতো। এছাড়া যেসব মেশিন এখানে  আছে সেগুলো হেভি রিপেয়ার করার চেষ্টা করছি।'

সহকারী সেতু প্রকৌশলী মো. তহিদুল ইসলাম বলেন, ' সারা বাংলাদেশে রেলওয়ে যেসব সেতু মেরামত হয় বা তাৎক্ষণিক যে সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে গাড়ি চালানোর জন্য যে সিসি ক্রিপ দরকার হয় তা এখান থেকে দেওয়া সম্ভব যদি পর্যাপ্ত সার্পোট পাওয়া যায়।'

প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরোনো  এই সেতু কারখানার ওপরই নির্ভর করতো সারা বাংলাদেশের রেলসেতু এবং ক্রসিংয়ের মূল কার্যক্রম। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে  আবার চালু হয়েছে এ কারখানাটি। এতে আশার আলো দেখছেন রেলওয়ের সঙ্গে জড়িত সবাই। কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে আমদানিনির্ভরতা কমাবে সরকারের এবং কর্মসংস্থান বাড়াবে। কিন্তু লোকবল সংকট নিরসনই এখন মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ কারখানার।

ইএ