রাঙামাটিতে তিন শতাধিক ব্যক্তির নামে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ভুয়া ঋণের নোটিশ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ১২ বছর আগে সরকারি সহায়তা দেয়ার নামে এনআইডি ও ছবি নিয়ে একটি প্রতারক চক্র এই ঋণ জালিয়াতি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভিক্ষা করে কোনোমতে টিকে থাকা জীবনে হঠাৎ অশনি সংকেত, ব্যাংকের ঋণখেলাপির তালিকায় তার নাম। অথচ তার মতো অনেকেই চোখে দেখেননি রাঙামাটির লংগদু সোনালী ব্যাংকের শাখা। মাথায় ভুয়া ঋণের বোঝা জানতেই আকাশ ভেঙে পড়ে তার মতো আরও প্রায় ৩০০ হতদরিদ্র গ্রামবাসীর।
এক নারী বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করে খাই। আমার কোন ঘর নেই, দুয়ার নেই। কিন্তু আমার নামে ঋণের অভিযোগ, আর এর বিচার চাই।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি সহায়তা দেয়ার নামে ২০১২ সালে লংগদুর বগাচত্বর ও ভাসাইন্যাদম ইউনিয়নের হতদরিদ্র মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ছবি নিয়ে যায় একটি চক্র। এরপর সেই ছবি ও পরিচয়পত্রের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে প্রত্যেকের নামে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নেয় তারা। সবমিলিয়ে এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। প্রায় এক যুগ পর ব্যাংক থেকে ঋণ খেলাপির নোটিশ পেয়ে হুশ ফেরে ভুক্তভোগীদের।
ভুয়া ঋণের নোটিশের প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। ছবি: এখন টিভি
ভুক্তভোগী একজন বলেন, ‘আমি তো কোন সোনালী ব্যাংক চিনিও না। আবার কখনও ব্যাংকেও আসিনি। তাহলে ব্যাংকে আমার লোন থাকবে কী করে?’
বিষয়টি সুরাহা করতে উপজেলা পরিষদে জরুরি সভা ডাকেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। সভায় ভুক্তভোগীদের হয়রানি বন্ধের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেয়া হয়।
লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, ‘ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে আমার দাবি, অসহায় ও নিরীহ মানুষগুলো যেন ঋণের দায় থেকে বাঁচতে পারেন।’
প্রান্তিক পর্যায়ে এতো বড় ঋণ জালিয়াতি কিভাবে সম্ভব প্রশ্ন করা হলে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবুল কাসেম। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে বলে তিনি জানান।
কৃষি ঋণ নেয়ার এক বছরের মাথায় সাধারণত নোটিশ পাঠানো হয় বা ঋণ পরিশোধের কিস্তি শুরু হয়। অথচ কোটি কোটি টাকার ঋণ দিয়েও প্রায় যুগ পার হওয়ার পরও গ্রাহকদের কেন খোঁজ করা হয়নি সেই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।