রেমিট্যান্সে মজবুত হচ্ছে রতডাঙ্গার অর্থনীতি

0

নড়াইলের কৃষিনির্ভর রতডাঙ্গা গ্রামের পরিচিতি এখন কুয়েত গ্রাম নামে। গ্রামটির অন্তত সাতশ' মানুষ থাকেন প্রবাসে। প্রতিমাসে রেমিট্যান্স পাঠান অন্তত পাঁচ কোটি টাকা। আর গত পনেরো বছরে ছোট এই গ্রামটিতে রেমিট্যান্স এসেছে অন্তত নয়শ' কোটি টাকা।

নড়াইল সদরের রতডাঙ্গা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মো: আকুব্বর শেখের ভাগ্য বদলের গল্পের শুরু দুই দশক আগে। সেসময় বর্গা চাষ করে সংসার চালাতেন তিনি। ২০ বছর আগে ভাইয়ের সহযোগিতায় পাড়ি জমান প্রবাসে। জীবনের ২০ বছর কাটিয়েছেন কুয়েতে। এই সময়ে ধার দেনা শোধ করে আরও দুই ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। অভাবের জীবনে তিনি এক সময় অন্যের যে সকল জমি বর্গা চাষ করেছেন এখন সেই সব জমি কিনে সেই জমিতে সরিষা চাষ করে কাজ করছেন। প্রবাসে থেকে নিজ গ্রামের বাড়িতে নির্মান করেছেন বহুতল ভবন। শুধু গ্রামেই নয় নড়াইল শহরেও জমি কিনে গড়েছেন ছয় তলা বাড়ি।

নড়াইল শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের চিত্রার পাড়ের এই গ্রামটিতে প্রায় দশ হাজার মানুষের বসবাস। এই জনপদের ৭শ' পুরুষ থাকেন কুয়েত, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কানাডা, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে অন্তত ৫শ' পুরুষ থাকেন কুয়েতে। এক সময় এই গ্রামের শতভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভর করতো। তখন প্রতিনিয়ত এখানে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীগত সংঘর্ষ লেগেই থাকতো। আশির দশকের শেষের দিকে এই গ্রামের মানুষ জীবিকার তাগিদে প্রবাসে পাড়ি জমাতে থাকেন। বর্তমানে এ গ্রামের শতভাগ পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য বিভিন্ন দেশে থাকে। বর্তমানে এ গ্রামের অর্থনীতি মানে রেমিট্যান্স।

গ্রামে রয়েছে একটি বাজার। প্রাইমারি স্কুল ও হাই স্কুল। রয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। শুধু এই গ্রামের প্রবাসীদের কথা চিন্তা করে এখানে রয়েছে অগ্রনী ব্যাংকের একটি শাখা।

রতডাঙ্গা শাখার অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক পুলক কুমার শীল বলেন, 'বিদেশে যারা থাকে তারা এখানে একাউন্ট খুলছে। এদের মধ্যে কুয়েত প্রবাসী বেশি।'

বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর ফলে আশপাশের গ্রাম থেকে এই গ্রামের অর্থনীতি বেশি শক্তিশালী। এ জনপদে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও কমেছে।

চন্ডিবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. জাহিদুর রহমান বলেন, 'রেমিট্যান্স পাঠানোয় আমাদের জন্য যেমন উপকার হচ্ছে, দেশের জন্যও উপকার হচ্ছে।'

প্রবাসে যাওয়ার আগে স্ব স্ব কাজের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে গেলে আরও বেশি রেমিট্যান্স উপার্জন করতে পারবে বলে মনে করেন জেলার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ আবুল বাশার আল মামুন সিদ্দিকী। এখন টেলিভিশনকে তিনি বলেন, 'যেসব বিষয়ের চাহিদা যত বেশি সে বিষয়ে বাইরে যাওয়ার সুযোগ তত বেশি।'

এই গ্রামের প্রবাসীদের সাফল্য দেখে আশপাশের গ্রামের মানুষও বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।

এসএসএস

BREAKING
NEWS
1