বছরজুড়েই নিয়মিত বিরতিতে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের বাজারই ছিল ভোক্তাদের অস্বস্তির কারণ- কোন কোন সময় ডিমের দাপট, কখনও নিয়ন্ত্রণহীন আলুর দর, আবার হুটহাট পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের উচ্চ ঝাঁজ অথবা পর্যাপ্ত উৎপাদন ও সরবরাহ সত্ত্বেও বাজারে শীতের সবজির তেলেসমাতি।
আর আমিষের দর পুরোবছরই নাগালের বাইরে থাকলেও বছরের শেষ নাগাদ দর বেঁধে দেয়ায় কিছুটা বেড়েছে গরুর মাংসের বিক্রি।
ক্রেতারা বলেন, 'দিন দিন দাম বেড়েই চলছে, কমার কোন সম্ভাবনা নেই। আয় অনুযায়ী চলা খুব কঠিন হচ্ছে। ১ হাজার টাকার কাঁচা বাজার করলেও ব্যাগ ভরে না। আমরা মধ্যবিত্তরা ভালোভাবে খেতেও পারছিনা। সরকারের এতে কোন চিন্তা আছে বলে মনে হয়না।'
বছরের শেষভাগে এসেও চলে ক্রেতা-বিক্রেতার দর কষাকষি
সবশ্রেণির মানুষের খাবার পাতে আলুর উপস্থিতি না হলেই নয়। কিন্তু আলুও নাগালের বাইরে যাওয়ার দশা। বলা যায় বছরের শেষ নাগাদ চালের কেজির চেয়েও বেশি এখন আলুর দর। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে দেশের আলুর বাজারে দেখা দেয় অস্থিরতা। হিমাগারে দাম বেঁধে দিয়েও ঠেকানো যায়নি ঊর্ধ্বগতি।
ডিসেম্বরে নতুন আলু উঠলেও সেই প্রভাবকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাঙালির খাবারের অন্যতম এই অনুষঙ্গ। রোজকার প্রয়োজনীয় আলুর দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৭০ টাকায়। লাল আলু ছাড়িয়েছে ১শ' টাকা কেজি।
বেঁধে দেওয়া দামেও বিক্রি হয়না আলু
আলু বিক্রেতারা জানান, আলুর বাজার এখন একরকম থাকবেনা। কমবে আবার বাড়বে। বাজার অস্থিরতার পিছনে কিছু লোকও জড়িত। আবার গাড়ি না আসলে দাম বাড়ে।
এদিকে চলতি ডিসেম্বরে হঠাৎ ভারত সরকারের বিশ্বব্যাপী রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে দেশে পেঁয়াজের ঝাঁজে দিশেহারা হয়ে ওঠে ক্রেতা। দেশি পেঁয়াজের দাম ঠেকে প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিকল্প উৎস থেকে আমদানি ও মৌসুমের নতুন পেঁয়াজ মুড়িকাটা আসলেও দাম কমেনি আশানুরুপ।
ডিসেম্বরে ডাবল সেঞ্চুরি পার করে পেঁয়াজ
এ বছর জুনে হঠাৎ বেড়ে যায় কাঁচা মরিচের ঝাঁজ। বছর শুরুতে ১শ' টাকার মরিচ বাজারভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৭০০ টাকা পর্যন্ত। তবে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। পর্যাপ্ত সরবরাহ সত্ত্বেও কেন এত দাম- প্রশ্ন ক্রেতাদের।
কাঁচা মরিচ ক্রেতারা বলেন, 'বছরের শেষ আর শুরু কিছুই বুঝতে পারিনা। যে যেভাবে পারতেছে সেভাবেই দাম নিতেছে। দাম বেশির কারণে মরিচ কিনতে পারিনা।'
চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্রয়লার মুরগির দামবৃদ্ধি অস্থির করে বাজার। বছর শুরুতে ১৫০ টাকার মুরগি এক লাফে কেজিতে বেড়ে যায় ১০০ টাকা। বছরের মাঝামাঝিতে যার দাম ওঠে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা পর্যন্ত।
তবে কিছুদিন আগে দাম কমলেও ডিসেম্বরে এসে আবারও বেড়েছে উত্তাপ। নতুন বছরের আয়োজন আর নানা আনুষ্ঠানিকতার অজুহাতে কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়।
মুরগি বিক্রেতারা বলেন, কারখানা বন্ধ আবার বছরের প্রথমদিন মুরগির চাহিদা থাকায় দাম সবসময় বাড়ে। এখন আবার বিয়ের অনুষ্ঠানও বাড়সে তাই দাম কমে নাই।
জুনর মরিচের দাম ছিল লাগাম ছাড়া
হাঁস কিনতেও হাসফাঁস অবস্থা ক্রেতার। শীতে চাহিদা বাড়ায় হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী দরও। মাস ব্যবধানে দেশি জাতের হাঁসের দাম বেড়েছে আকারভেদে ৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে রাজহাঁসের রাজত্বে ঢুঁ মারতে গলদঘর্ম অবস্থা ক্রেতার। ৫শ' টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়।
হাঁস ক্রেতারা বলেন, নতুন বছরের কারণে দাম এখন অতিরিক্ত। ৫০০ টাকার হাঁস এখন ৭০০ টাকা।
বছরের মাঝামাঝিতে আলোচনায় আসে ডিম। ডজন ছাড়িয়ে যায় ১৬০ টাকা। নিয়ন্ত্রণ ফেরাতে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা বেঁধে দেয়া হলেও কার্যকর হয়নি তা। তবে আমদানি করে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে ডিমের দাম। বর্তমানে ১২০-১২৫ টাকা ডজনে মিলছে ডিম।
চলতি বছরের গোড়া থেকেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল গেলো কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১২ শতাংশের উপরে। অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫৬ শতাংশ। যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তবে নভেম্বরে এসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক চার নয় শতাংশ। তবে নতুন বছরে দ্রব্যমূল্য নিম্নমুখী ধারায় ফিরবে কি-না তা নিয়ে সংশয় কাটছে না ভোক্তাদের।





