রঙিন চালের চাষ পদ্ধতি, ফলন ও পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণা করে এমন সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির ও তার গবেষক দল। তিন বছরের গবেষণায় তিনি এই সাফল্য পেয়েছেন। গবেষক দলে আরো যুক্ত ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাগরিকা খাতুন।
আজ (শনিবার, ২৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার এসব তথ্য জানান ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নেছার উদ্দিন, ড. মো. আলমগীর হোসেন-১ ও ড. মো. আলমগীর হোসেন-২।
গবেষণার বিষয়ে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির বলেন, 'রঙিন চাল (Oryza sativa L.) মূলত পাহাড়ি অঞ্চল এবং উদ্ভাবনী কৃষকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এটি এখন সাধারণ মানুষের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চালের রং লাল, কালো, বাদামি কিংবা বেগুনি হতে পারে। আমরা মূলত লাল ও কালো রঙের চালটি নিয়ে গবেষণা করে এর মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণের মাত্রা বের করেছি।'
তিনি বলেন, 'গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা চালের চেয়ে কালো চালের ব্রাণে ২-৩গুণ খনিজ পদার্থ আয়রন ও জিংক বিদ্যমান। এগুলোর বাইরের আবরণে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন এবং অন্যান্য ফাইটো-কেমিক্যাল উপাদান এ চালকে অনন্য করেছে। অ্যান্থোসায়ানিনের উপস্থিতির কারণে ব্রাণের রং লাল হয়ে থাকে।'
রঙিন চালের পুষ্টিগুণের বিষয়ে প্রধান গবেষক বলেন, 'এই চাল শুধু দেখতে সুন্দরই নয়, এর রয়েছে অপরিসীম পুষ্টিগুণ এবং ঔষধি গুণাবলি। কালো, লাল, বেগুনি, এমনকি বাদামি রঙের এই চাল শুধু তার বাহারি চেহারার জন্য নয় বরং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্যও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।'
অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির গবেষণার ফলাফল জানিয়ে বলেন, 'কালো চালের পুষ্টিগুণ সাদা চালের তুলনায় অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, কালো চালে জিংক এবং আয়রনের পরিমাণ সাদা চালের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি। কালো চালের প্রতি ১০০ গ্রামে ১১২০-৭০৩৫ মিলিগ্রাম অ্যান্থোসায়ানিন থাকে, যেখানে সাদা চালে এর পরিমাণ খুবই নগণ্য। কালো চালে মোট ফেনল কন্টেন্ট (TPC) থাকে ৭-১০ মিলিগ্রাম GA/গ্রাম, যেখানে সাদা চালে এটি প্রায় নেই বললেই চলে। একইভাবে কালো চালে মোট ফ্লাভোনয়েড কন্টেন্ট (TFC) ৫.০-৬.৫ মিলিগ্রাম QE/গ্রাম, যেখানে সাদা চালে এটি ৩.০-৪.৫ মিলিগ্রাম QE/গ্রাম।'
চাষাবাদ ও ফলন সম্পর্কে প্রধান গবেষক জানান, রঙিন চাল চাষ সাধারণ ধানের মতোই সহজ। এটি মূলত আমন মৌসুমে চাষ হয়, তবে বোরো মৌসুমেও ফলন সম্ভব। দোআঁশ মাটি থেকে শুরু করে কাদামাটিতেও এই ধান ভালো জন্মায়। উপযুক্ত সার প্রয়োগে (ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি) একরে ফলন প্রায় সাড়ে তিন টন পর্যন্ত হতে পারে। যদিও এর ফলন সাধারণ সাদা ধানের তুলনায় কিছুটা কম, তবে বাজারমূল্য অধিক হওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। এই ধানের একটি চ্যালেঞ্জ হলো কম রাসায়নিক সার সহনশীলতা এবং পাখি বা রোগবালাইয়ের প্রতি সংবেদনশীল। তাই উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে।
গবেষণার বিষয়ে সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, 'রঙিন চালের পুষ্টি উপাদান মূল বাইরের আবরণে থাকে। সাধারণ মিলে ছাঁটাইয়ের ফলে এর পুষ্টিগুণ কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে বেশি পরিমাণে কমবে না। সবচেয়ে ভালো হয় ঢেঁকিতে ছাঁটাই করে খাবারের জন্য ব্যবহার করা।'