সাহিত্য
সংস্কৃতি ও বিনোদন
0

বইমেলায় অর্থ-বাণিজ্যের বই কম

শাহনুর শাকিব

বইমেলায় এবারও অর্থ-বাণিজ্যের বই কম। ভালমানের পাণ্ডুলিপি না পাওয়ার কথা বলছেন প্রকাশকরা। অনেকেই মনে করেন, এখন সময় বিবেচনায় লেখালেখি কম লাভজনক। আবার যারা লিখছেন তাদের অনেকে বেছে নিচ্ছেন বিদেশি ভাষা।

নতুন বইয়ের খোঁজে পাঠকের সমাগম হয় অমর একুশে বইমেলায়। উপন্যাস, গল্প, কবিতার পাশাপাশি প্রবন্ধ কিংবা গবেষণা, সবধরণের বই নিয়ে এবারও হাজির ৬৩৫ টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।

গতবছরের চেয়ে এবারের মেলায় প্রকাশনীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৪ টি। বিশাল জনগোষ্ঠীর বাংলায় কল্পকাহিনী নির্ভর বইয়ের সংখ্যা বাড়লেও, বাড়েনি চিন্তাকে উস্কে দেয়ার মতো তথ্য ও গবেষণাধর্মী বই। আর উদীয়মান অর্থনীতির এ দেশেও অর্থ-বাণিজ্য বিষয়ক বই অপ্রতুল।

এবারের বইমেলায় অর্থনীতির বই প্রকাশিত হয়েছে হাতেগোণা কয়েকটি। প্রথমা প্রকাশনী থেকে ৭০টি নতুন বইয়ের মধ্যে অর্থনীতির বই বের হয়েছে ৩টি।

তথ্যভিত্তিক বইয়ের জন্য জনপ্রিয় প্রকাশনী ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) থেকে এবার অর্থনীতি সংক্রান্ত নতুন বই আসেনি। তবে আকবর আলী খান, রেহমান সোবহান, রিজওয়ানুল ইসলামসহ অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের লেখা পুরোনো বইগুলো এবারও আকৃষ্ট করছে পাঠকদের।

ইউপিএলের জেষ্ঠ্য বিপণন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, 'অর্থনীতি সংক্রান্ত বই প্রতিবছর বের হবে বা মেলায় আসবে, আমরা আসলে সে চিন্তা ভাবনা থেকে কাজ করি না। আমাদের জায়গা থেকে ইডিটোরিয়াল দল কাজ করে যাচ্ছে।'

ফিকশন ও নন ফিকশন সব ধরণের বই বের করে ঐতিহ্য প্রকাশনী। এবারও তাদের নতুন বইয়ের সংখ্যা দুই শতাধিক। যেখানে অর্থ বাণিজ্য বিষয়ে একজন লেখকের কয়েকটি বই ছেপেছে ঐতিহ্য।

প্রতিবছর ব্যবসা-বাণিজ্যের কৌশল ও মার্কেটিং সংক্রান্ত বেশ কিছু নতুন বই আসে মেলায়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তরুণ উদ্যোক্তাদের এসব বইয়ে আগ্রহ বেশি।

ইত্যাদি প্রকাশনের একজন বিক্রেতা বলেন, 'যারা নতুন কোনো ব্যবসা বা মার্কেটিং শুরু করতে চাচ্ছে। তারা সেরকম বই কিনছে।'

মাওলা ব্রাদার্স থেকে এ যাবৎ ১০ হাজার বই প্রকাশিত হয়েছে। আগের প্রকাশিত অর্থনীতির কয়েকটি বই স্থান পেলেও এবার নতুন বইয়ের সংখ্যা শূন্য। একই চিত্র আগামী প্রকাশনীতেও। এ বছর তাদের শতাধিক বই বের হলেও অর্থ বাণিজ্যের নতুন বই স্থান পায়নি মেলায়। আর বাংলা একাডেমি নানা তথ্যসমৃদ্ধ বই প্রকাশ করলেও অর্থবাণিজ্য নিয়ে তাদের নতুন কোনো বই নেই।

অর্থনীতি বিষয়ক নতুন লেখকদের মধ্যে অন্যতম একজন মোহাইমিন পাটোয়ারি। পুঁজিবাদের কাছে শিল্প প্রতিভা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বলে মত তার।

অর্থনীতি গবেষক মোহাইমিন পাটোয়ারি বলেন, 'যে ব্যক্তি ভালো অর্থনীতি বোঝে সে যদি ব্যাংকে চাকরি করে তাহলে সে অনেক বেশি আয় করতে পারে। সে বই লিখতে গেলে লেখাটা তার জন্য লস প্রজেক্ট। সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করতে হয় ৮ ঘণ্টা করে। এ সময় দিয় বই লেখা সম্ভব না।'

মানুষের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে অর্থনীতি। তাই সহজ ভাষায় লেখা বইয়ে, মনের খোরাক মেটাতে চান পাঠক।

একজন পাঠক বলেন, 'যদি অর্থনীতির বিষয়গুলো সুখপাঠ্য হয়, সবাই পড়তে পারে, পড়ে বুঝতে পারে তাহলে সবাই কিনতে আগ্রহী হবে।'

তবুও দেশে গবেষণাধর্মী বই প্রকাশিত হচ্ছে, যা অনেকটাই বিদেশি ভাষায়। তাই দেশি পাঠক বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানালেন অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ। বলেন, 'অর্থনীতি হচ্ছে জ্ঞান চর্চার সাথে যা যা আছে সেগুলো। তা তো বাংলা ভাষায় লেখার লোক কম। সেজন্য অর্থনীতি বিষয়ক যা লেখা আছে সব ইংরেজিতে পাওয়া যায়।'

গতবছর বইমেলায় বেচাবিক্রি হয় ৪৭ কোটি টাকার বই। সেবার নতুন বই প্রকাশিত হয় ৩ হাজার ৭৩০টি। যার মধ্যে গবেষণার ৭৫ ও প্রবন্ধের বই ১৯৭ টি। অন্যদিকে কবিতার বই ১ হাজার ২৪৭, উপন্যাস ৫০৩ আর গল্পের বই প্রকাশিত হয় ৪৬৬ টি।

স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে ৭ কোটি থেকে জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নয়ীল অর্থনীতির কাতারে যেতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। সে যাত্রায় গতি আনতে অর্থনীতি সচেতন নাগরিক সমাজ প্রয়োজন। যে সমাজ গড়তে সহায়ক ভূমিকা রাখবে অর্থ-বাণিজ্যের বই।

এসএস